সূচীপত্র || রন-দ্য-ড্রাগন-হোল্ডার-৮
৪১
রন ড্রাগনকে নিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগল এবং পরের মুহূর্তেই ড্রাগন দ্রুতগতিতে দ্বীপের ভিতরে ঢুকে গেল, যেখানে লিসা, মর্গান এবং গ্যাব্রিয়েল দাঁড়িয়ে ছিল। রনকে ড্রাগনের উপরে বসে দেখে তারা সবাই অবাক হয়ে গেল।
লিসা – রন কীভাবে মর্গানের ড্রাগনকে নিয়ন্ত্রণ করছে? এটা তো অসম্ভব।
রন – জানেমান, এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? যখন আমরা তিনজন মর্গানের সাথে এখানে আসছিলাম, তখন আমি মর্গানকে বলেছিলাম ড্রাগনকে আমি নিয়ে যাব। সেই সময় আমি শিখে নিয়েছিলাম কীভাবে মর্গানের ড্রাগনকে বশে আনতে হয়, কারণ আমি জানতাম যে এখান থেকে পালাতে হলে ড্রাগনের সাহায্য নিতে হবে।
শালা কমিনা! গ্যাব্রিয়েলও আকাশের দিকে উড়ল, আর মর্গান উপকূলের দিকে দৌড়াতে লাগল যাতে সে উপকূলে গিয়ে অন্য ড্রাগনে চড়ে রনের উপর আক্রমণ করতে পারে। মর্গান একটু দূরত্বে পৌঁছতেই রন ড্রাগনটিকে মর্গানের দিকে ঘুরিয়ে নিল এবং যখন সে মর্গানের কাছাকাছি পৌঁছাল, রন ড্রাগনটিকে নিচে নামাল যাতে মর্গানকে সহজেই ধরা যায়। রন খুব শক্তভাবে মর্গানের ঘাড় ধরে তাকে ওপরে তুলে নিল। মর্গান নিজেকে রনের কবল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলেও সে ব্যর্থ হল। রন ড্রাগনটিকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেল।
কেমন লাগছে, মর্গান? মাফ কর, একটু সম্মান দিয়ে বলতে চাইছিলাম, কেমন লাগছে কাল্লু?
আমাকে ছেড়ে দে। মর্গান হাঁপিয়ে উঠা গলায় বলল।
নে, ছেড়ে দিলাম।
রন ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে মর্গান দ্রুত মাটিতে পড়ে গেল এবং অজ্ঞান হয়ে গেল।
লিসা – মালিক, মর্গান এখনও বেঁচে আছে কিনা?
সে কেবল অজ্ঞান হয়েছে।
এবার রন ড্রাগনটিকে দ্বীপের উপর নামিয়ে দিল। গ্যাব্রিয়েলও নিচে ছিল।
গ্যাব্রিয়েল – তাহলে আমার ভাই, এবার লড়াই শুরু করা যাক?
লড়াই, কেমন লড়াই? আমি রক্তপাত একদমই পছন্দ করি না। কেন আমরা কথায় কথায় এই সমস্যার সমাধান করি না?
তোর কী মনে হয়, আমি তোকে এত সহজে এখানে থেকে জীবিত যেতে দেব?
আমরা দুজন একটা সমঝোতা করতে পারি।
রন, তোর তরবারি বের কর, আমি নিরস্ত্রের উপর আঘাত করতে চাই না।
রন ড্রাগন থেকে নিচে নেমে ড্রাগনের দিকে তাকিয়ে বলল, গ্যাব্রিয়েল, তুই জানিস কিনা আমি জানি না, কিন্তু ড্রাগনরা তাদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলে যখন।
যখন?
যখন তাদের কানের কাছে হুইসেল বাজানো হয়।
একদিকে রন এই কথা বলল, আর অন্যদিকে সে সাথে সাথেই এই কাণ্ড করে ফেলল, যাতে ড্রাগন দ্রুত গ্যাব্রিয়েলের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্যাব্রিয়েল ড্রাগনের সাথে লড়াই শুরু করল।
এদিকে রন লিসার কাছে এসে তার দিকে হাত বাড়াল।
চলো লিসা, আমার সাথে চলো।
মার্টিন, এখন আমার মনে তোমার প্রতি ঘৃণা আরও বেড়ে গেছে।
রন কিছুক্ষণ লিসার দিকে তাকিয়ে রইল, আর তারপর চলে যেতে লাগল। কিছুটা দূর যাওয়ার পর রনের পা হঠাৎ থেমে গেল, সে পেছন ফিরে লিসার দিকে তাকিয়ে বলল।
লিসা, যদি এটাই তোমার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে আমি খুব দুঃখিত হবো সেই দিন যেদিন আমি তোমাকে মেরে ফেলবো।
সে দিন কখনও আসবে না।
দাওয়ানও একই কথা বলেছিল। যাই হোক, বিদায় লিসা, আবার দেখা হবে।
লিসাকে বিদায় জানিয়ে রন উপকূলের দিকে চলে গেল। সেখানে এখনও একটি ড্রাগন ছিল, যে তার পা ছড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রন ধীরে ধীরে সেই ড্রাগনের কাছে গেল এবং আস্তে করে ঘুমন্ত ড্রাগনটিকে নাড়াল, কিন্তু ড্রাগনের উপর কোনো প্রভাব হল না, সে আগের মতোই ঘুমিয়ে রইল।
শালা, মরে গেল নাকি? উঠছে কেন না?
রন কিছুক্ষণ ধরে ড্রাগনকে জাগানোর কৌশল নিয়ে ভাবতে লাগল, এবং যখন তার কোনো কৌশল কাজ করল না, তখন সে জোরে একটি লাথি মারল ড্রাগনের উপর, কিন্তু ড্রাগন তখনও উঠল না।
কী অলস হয়ে গেছে ড্রাগনগুলো।
রন ধীরে ধীরে ড্রাগনের আরও কাছে গেল এবং হুইসেল বাজিয়ে দিল, ড্রাগন আতঙ্কে জেগে উঠল এবং রন সময় নষ্ট না করে ড্রাগনের পিঠে লাফিয়ে উঠে বসল।
চলো আমার ঘোড়া!
রনের কথা বলা মাত্র ড্রাগন রনকে ঝাঁকি দিয়ে নিচে ফেলে দিল।
ঠিক আছে, এবার ঘোড়া বলব না, এখন চলো।
রাজের জ্ঞান ফিরে এসেছিল, কিন্তু তার অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন ছিল। গ্যাব্রিয়েল দ্বারা দেয়া ক্ষত এখনও সেরে ওঠেনি। ব্যালাডোনা এখনও দাঁড়িয়ে ছিল। রিয়া, আদিত্য, বিলান্দর এবং শেঠ ব্যালাডোনার ডেকে চলে এল, এবং তারা পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করল। প্রথমে রিয়া শুরু করল।
রিয়া – রন তো চলে গেছে আর রাজ অচেতন, জাহাজও থেমে আছে। আমি তোমাদের তিনজনের কাছে জানতে চাই যে আমরা সামনে এগোব, নাকি ফিরে যাব?
শেঠ – রন ছাড়া আমরা এগোতে পারব না, গ্যাব্রিয়েল আর মর্গান আমাদের এক মিনিটের মধ্যেই পিষে ফেলবে।
শেঠ, রন কোনো ত্রাণকর্তা নয় যে সে আমাদের বাঁচাবে। রন ছাড়া আমরা ডেথ আইল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছেছিলাম, মনে নেই তোমার?
আমার মনে আছে, কিন্তু এটাও মনে আছে যে ডেথ আইল্যান্ড থেকে বের করে এনেছিল রন, রাজ নয়। আর রনকে ত্রাণকর্তা বলার কথা বললে, আমি আপনাকে একটা কথা বলি, যখন গ্যাব্রিয়েল আমাকে আর আদিত্যকে ব্যালাডোনার নিচে ফেলে দিয়েছিল, তখন আমাদের রনই বাঁচিয়েছিল, আদিত্য নয়।
শেঠ, নিজেকে শান্ত করো। দেখে মনে হচ্ছে সেই ঘটনার তোমার উপর গভীর প্রভাব পড়েছে।
শেঠ এই কথা শোনার সাথে সাথেই উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়াল এবং রিয়ার দিকে রাগের সাথে তাকিয়ে বলল।
দেখুন ম্যাডাম, এখন সময় এসেছে যে আপনি রনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা বন্ধ করবেন। রাজ, রনের মতো হতে পারবে না, যদিও তার কাছে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা আছে। আর সেই ঘটনার আমার উপর কোনো খারাপ প্রভাব পড়েনি, আমি এখনই সেই কাজ করছি যা আমার অনেক আগেই করা উচিত ছিল।
আদিত্য আর বিলান্দার চুপ থাকার মধ্যেই মঙ্গল দেখল, কিন্তু শেঠ এমন একটি মোড় নিয়েছে যা রিয়ার কিছুটা বোধগম্য হচ্ছে না।
শেঠ, একবার রন তোমার জীবন বাঁচিয়েছিল বলে, তুমি রনকে মাথায় তুলে বসিয়েছ। এটা ভুলে যেও না যে রনই সেই ব্যক্তি, যে তোমার বন্ধু ক্যাপ্টেন নায়ারকে ব্যালাডোনা থেকে নিচে ফেলে দিয়েছিল।
ক্যাপ্টেন নায়ার এখন এই পৃথিবীতে নেই এবং তিনি খুবই ভালো ক্যাপ্টেন ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই লড়াই ছিল নায়ার আর রনের ব্যক্তিগত বিবাদ, তা ব্যালাডোনার যুদ্ধ নয়। এখন আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে রন আমাদের সবার মধ্যে সেরা, এবং একমাত্র তিনিই যে মর্গান আর গ্যাব্রিয়েল থেকে আমাদের সবাইকে বাঁচাতে পারেন।
চলো, আমি ধরেই নিলাম যে রন আমাদের সবার মধ্যে সেরা, কিন্তু সমস্যা সেটি নয়। সমস্যা হচ্ছে, রন এখন এখানে নেই এবং আমি যা মনে করি তাতে রন এখন বেঁচেও নেই।
রিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই পুরো পরিবেশে ড্রাগনের গর্জন প্রতিধ্বনিত হলো।
সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো একটা ড্রাগন আসছে। ড্রাগন দূরে ছিলো এবং অনেক উপরে ছিলো, তাই কেউ বুঝতে পারছিল না ড্রাগনের ওপর কে বসে আছে।
রিয়া-ওহ না। আবার গ্যাব্রিয়েল এসে গেছে, এবার এর মোকাবিলা কীভাবে করবো।
সামনে থেকে সরে যাও, এ আমি! রন চিৎকার করে সবাইকে বললো। কিন্তু কেউই তাকে দেখতে পাচ্ছিল না এবং তার কথাও শুনতে পাচ্ছিল না।
এরা সামনে থেকে সরে যাচ্ছে না কেনো।
রন ড্রাগনটাকে নিয়ে ব্যালাডোনা’র উপরে পৌঁছল। কিন্তু ড্রাগনকে নিচে নামাতে কী করতে হবে তা রন জানত না।
এখন এটাকে কীভাবে নিচে নিয়ে যাবো। বলেই রন ড্রাগনের মাথা নিচের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করল।
এই কাল্লু, নিচে চল, আমি এত উপরে থেকে লাফ দিতে পারব না।
রনের এই কাজ দেখে ড্রাগন আরো রেগে গেলো এবং রনকে নিচে ফেলে দিলো।
এবার তো গেলাম। কেউ ধরো!
একটা জোরালো আওয়াজের সাথে রন ব্যালাডোনা’র ডেকে এসে পড়ল, ড্রাগন গর্জন করতে করতে চলে গেলো।
রিয়া- এটা তো রন! কিন্তু এখনও বেঁচে আছে কীভাবে?
যে ড্রাগনের উপরে রন এসেছিল, আদিত্য সেই ড্রাগনটিকে যেতে দেখছিল।
রন, তুমি এই ড্রাগনটাকে কিভাবে বশে আনলে?
কেউ আমার সাথে কথা বলেছে কি?
রন, আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম তুমি ওই ড্রাগনটাকে কিভাবে বশে আনলে?
আমি এত উপরে থেকে পড়েছি, আর তোমরা আমাকে তুলতে যাওয়ার বদলে বোকা বোকা প্রশ্ন করছো।
বিলান্দার আর সেঠ রনকে ধরে তুলে দাঁড় করাল। রনের জামাকাপড় রক্তে ভেজা ছিল এবং তার হাতও কাটা ছিল।
আদিত্য- নিজের হাত কেটেছিস কেন রন, আর তোর এই অবস্থা হলো কেনো?
আগে পানি দাও। অনেক তেষ্টা পেয়েছে, প্রাণটাই তো নিয়ে নিয়েছিল।
সেঠ- রনকে ভিতরে নিয়ে চল।
সেঠ আর বিলান্দার রনকে কাঁধে ভর দিয়ে সেই ঘরে নিয়ে গেল যেখানে রাজ ছিল। সেঠ আর বিলান্দার মিলে রনকে আস্তে করে সোফায় শুইয়ে দিলো এবং টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে তার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
রন- এটা কী দিচ্ছিস বাপু।
বিলান্দার একবার গ্লাসে তাকিয়ে আবার রনের দিকে চেয়ে বললো।
এটা তো পানি, তুইই তো চেয়েছিলি।
আমি পানি চাই বা মদ, আমাকে সবসময় মদের বোতলই এনে দিস। এখন যা, একটা বোতল নিয়ে আয়।
আদিত্য- যা বিলু, মদ নিয়ে আয়, মাফ কর রন, আমরা সবাই ভুল করেছিলাম, তোর ক্ষত দেখে এক মুহূর্তের জন্য আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে আমাদের সামনে সমুদ্রের সবচেয়ে বড় লম্পট আছে।
লম্পট, এটা ভালো লাগল।
গ্যাব্রিয়েল তোকে সাথে নিয়ে কেনো গিয়েছিল এবং তোকে বাঁচিয়ে কেনো ফিরতে দিলো?
গ্যাব্রিয়েল আমাকে তার সাথে নিয়ে গিয়েছিল কারণ। উমমম। হ্যাঁ, মনে পড়ল। গ্যাব্রিয়েল আমাকে তার সাথে নেমন্তন্ন দিতে চেয়েছিল।
নেমন্তন্ন দিয়েছিল আর তোকে।
তুই ঠিক শুনেছিস, গ্যাব্রিয়েল আর আমি মিলে অনেক ড্রাগন শিকার করেছিলাম, তারপর সেগুলো ভেজে খেয়েছিলাম, আর সাথে মদও ছিল। সত্যিই অনেক মজা হয়েছিল।
বিলান্দার মদ নিয়ে এসে গেল, রন তৎক্ষণাৎ তার হাত থেকে মদের বোতল ছিনিয়ে নিলো এবং উঠে দাঁড়ালো। তার নজর বিছানায় শুয়ে থাকা রাজের ওপর পড়লো।
ওর অবস্থা কেমন?
এখন রাজ ঠিক আছে।
ওর ভালো করে যত্ন নে, ও সামনে অনেক কাজে লাগবে। আমি আমার ঘরে চলে যাচ্ছি, খুব ঘুম পাচ্ছে এবং বিশ্রামও নিতে হবে।
রন তার ঘরের দিকে চলে গেলো। রনের চলে যাওয়ার পর রিয়া সেঠের দিকে তাকিয়ে বললো। দেখলে সেঠ, সে আমাদের কিছুই বলেনি। সে আমাদের বলেনি কেন গ্যাব্রিয়েল তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, আর কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো। আর তুমি বলো যে আমাদের সবাইকে রনের সাথে থাকতে হবে।
সেঠের কাছে রিয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না, সে চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো। বিলান্দার, আদিত্য এবং রিয়া তখনও দাঁড়িয়ে ছিল।
বিলান্দার- রিয়া, তৃতীয় মানচিত্রটা দাও।
কিন্তু কেনো?
আমি তিনটি মানচিত্র মিলে আবার একবার দেখতে চাই, হয়তো কিছু বোঝা যাবে।
রিয়া ড্রয়ারের থেকে মানচিত্রটা বের করে বিলান্দারকে দিলো।
এই মানচিত্রটা কিছুটা অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। ডেথ আইল্যান্ড পর্যন্ত রাস্তাটা ঠিক আছে, কিন্তু তার পরের রাস্তাটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।
আদিত্য- আমার মনে হয় স্পিরিচুয়াল শিপের ব্যাপারটা ভুল নয়তো?
মানে কী তোর?
আমার মানে হলো, হয়তো স্পিরিচুয়াল শিপ বলে কিছু নেই।
প্যালোরাতে আমি ছোটবেলা থেকে স্পিরিচুয়াল শিপের গল্প পড়ে আসছি, আর সেই শিপে গুপ্তধনের কথাও শুনেছি। কতজন সেই গুপ্তধনে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু কেউ পৌঁছাতে পারেনি। সমুদ্র সেই শিপ এবং শিপের মধ্যে থাকা গুপ্তধনের পাহারাদার, এবং স্পিরিচুয়াল শিপের অস্তিত্ব আছে এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো রনও সেটাকে পেতে চায়।
বিলু, আমি তো এখন থেকেই ভাবছি যে যখন সেই গুপ্তধন পেয়ে যাবো তখন আমরা কত ধনী হয়ে যাবো।
কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের আর সেই গুপ্তধনের মাঝে গ্যাব্রিয়েল দাঁড়িয়ে আছে।
গ্যাব্রিয়েল কি জানে সেই শিপ কোথায়?
অবশ্যই জানে। কিন্তু সে সেই গুপ্তধন নিতে পারবে না।
৪২
তার (গ্যাব্রিয়েল) জানার কথা নিশ্চিত যে ধন কোথায় আছে, কিন্তু গ্যাব্রিয়েল সেই ধনের কাছে পৌঁছাতে পারবে না।
গ্যাব্রিয়েল সেই ধনের কাছে পৌঁছাতে পারবে না! এটা কিভাবে সম্ভব? তাকে তো এই পুরো সমুদ্রের মাঝে কেউ থামাতে পারে না!
আদিত্য, যখন মার্টিন স্পিরিচুয়াল জাহাজ নিয়ে ডেথ আইল্যান্ড থেকে পালিয়েছিল, তখন গ্যাব্রিয়েল তাকে মারার জন্য সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড় তোলে, যার কারণে মার্টিন স্পিরিচুয়াল জাহাজের সাথে গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যায়। আর যতক্ষণ না সেই মানচিত্র সম্পূর্ণ হয়, আমরাও কিছু করতে পারব না।
তাহলে তোমার কথার মানে কি, আমাদের সেই ভয়ংকর গভীর সমুদ্রে নেমে জাহাজ আনতে হবে?
আমাদের ঠিক সেটাই করতে হবে, যদি আমরা সেই অমূল্য ধন চাই।
তাহলে এটা অসম্ভব।
রন তার ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিল, তখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। রন দরজা খুললে সামনের দিকে আদিত্য দাঁড়িয়েছিল।
তুই কি চাস?
আমি তোর কাছে কিছু জানতে চাই।
কি?
প্রথমে বল গ্যাব্রিয়েল কেন তোকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, আর তুই কীভাবে সেখানে থেকে জীবিত ফিরে এলি?
বলেছিলাম তো গ্যাব্রিয়েল আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিল।
তুই কি আমাকে বোকা ভাবছ? কারও পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে গ্যাব্রিয়েল তোকে তার আস্থায় ডেকেছিল, আর তোর ক্ষত দেখে তো সেটা একদমই মনে হয় না।
এটা সত্যি বলতেই হবে, রন ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বলল।
তুই কি বললি?
তুই সত্যিই জানতে চাস কেন গ্যাব্রিয়েল আমাকে নিয়ে গিয়েছিল?
হ্যাঁ।
তুই সত্যিই জানতে চাও?
আমি কি মজা করছি বলে তোর মনে হয়?
তাহলে শোন, গ্যাব্রিয়েল আসলে এই মহান রন-এর ভাই। অর্থাৎ আমার।
কি!
এখনই যদি তোর মুখ বন্ধ হয়ে যায়, পরে আরও শোনার পর তোর অবস্থা কি হবে সেটা দেখার মতো হবে।
একটু অপেক্ষা কর, আমি এখনই ধাক্কা সামলাচ্ছি যে গ্যাব্রিয়েল তোর ভাই!
হ্যাঁ, গ্যাব্রিয়েল আমাকে ব্যালাডোনা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল কারণ সে আমার রক্ত থেকে তার শক্তি ফিরে পেতে চেয়েছিল। এবারও ধাক্কা খেলি?
এবারে কিছুই হলো না। চালিয়ে যা।
কিন্তু আমি তার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে পালিয়ে এসেছি। আর তোর আরও একটা ধাক্কা লাগবে শুনে, আমি দাওয়ানকে খতম করে দিয়েছি।
এটা শোনার পর আমাদের একটা শত্রু কমল, কিন্তু তাতেও আমার কিছু হয়নি।
কিছুই হয়নি? এবার শোনো, আমি নিজেই একজন ড্রাগন হোল্ডার, আর আমারও সেই শক্তি আছে যা মর্গ্যানের আছে।
এটা শুনে আদিত্যর প্রচণ্ড ধাক্কা লাগল এবং সে নিজের বুকে হাত রেখে বলল,
তুই যা বললি, তাতে তো সত্যিই আমার হৃদয় বন্ধ হয়ে গেল।
কিন্তু আমার শক্তি শেষ হয়ে গেছে এবং আমার ড্রাগনও এখন আমার কাছে নেই।
তুই তো একদম শূন্য, তবে ড্রাগন হোল্ডার হওয়ার কী দরকার?
আমাকে শুধু গ্যাব্রিয়েলই মারতে পারবে, আর আমার ড্রাগনও খুব শিগগিরই আমার সাথে হবে।
আদিত্য একটু পেছনে সরে গেল এবং রনকে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখল।
তুই কি সত্যি বলছিস?
হ্যাঁ, এই কারণে আমি মারা যাইনি যখন লিসা আর দাওয়ান আমার পেটে তাদের তলোয়ার ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
ঠিক আছে, সেটা বোঝা গেল। কিন্তু বিলান্দার বলছিল যে যে তিনটি মানচিত্র তাদের কাছে আছে, সেগুলো অসম্পূর্ণ। বিলান্দার এ-ও বলছিল যে হয়তো মানচিত্রের আরেকটা অংশ ডেথ আইল্যান্ডে রয়ে গেছে।
বিলান্দার ঠিক বলেছে?
তোর কসম।
দেখতে তেমন বুদ্ধিমান মনে হয় না, কিন্তু বিলান্দার যা বলেছে তা সত্য। চারটি মানচিত্র হওয়া উচিত যাতে আমরা আমার জাহাজ পর্যন্ত পৌঁছতে পারি।
তোর কি জানা আছে মানচিত্রের শেষ অংশ কোথায় আছে?
হ্যাঁ, জানা আছে।
কোথায় আছে মানচিত্রের শেষ অংশ?
আমার পকেটে হাত দে।
আদিত্য ঠিক তাই করল, কিন্তু রনের পকেট ফাঁকা ছিল।
এর মধ্যে তো কিছুই নেই!
দ্বিতীয় পকেটে দেখ।
আদিত্য দ্বিতীয় পকেটেও দেখল, কিন্তু সেখানেও কিছুই ছিল না।
এখানেও নেই।
তাহলে পিছনের পকেটে দেখ।
আদিত্য আবার সেটাই করল, কিন্তু আগের মতোই ফল হলো-রনের পকেট একদম ফাঁকা।
এখানেও কিছুই নেই!
যখন হবে, তখনই তো পাবে। মানচিত্র আমি বিছানার নিচে লুকিয়ে রেখেছি।
তাহলে পকেটে হাত ঢোকানোর দরকার কী ছিল!
অশ্লীল কথা বলিস না।
আদিত্য তাড়াতাড়ি বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে মানচিত্রটা বের করল।
এটাই কি মানচিত্র?
না, আমার পকেটে দেখ!
তুই একদম খারাপ লোক!
আদিত্য মানচিত্রের শেষ অংশ খুলল, কিন্তু তা দেখে কিছুই বুঝতে পারল না। তবে তার নজর পড়ল মানচিত্রে আঁকা এক সামুদ্রিক ঝড়ের দিকে। সেটা দেখে সে বলল,
বিলান্দারও একটা ঝড়ের কথা বলছিল, এটা কি সেই ঝড়?
তুই কি কখনো এই ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিস?
না, কিন্তু তুই নিশ্চয়ই হয়েছ।
এই ঝড় আমার জাহাজ ছিনিয়ে নিয়েছিল।
বিলান্দার বলছিল যে স্পিরিচুয়াল জাহাজের কাছে কেউ পৌঁছতে পারবে না, কারণ সেটা সমুদ্রের গভীরে কবর দাওয়া আছে এবং সেই সমুদ্র নিজেই তার সুরক্ষা করে।
এই ঝড় আমাদের সমুদ্র পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এই ঝড়ের সংস্পর্শে আসা সবকিছুকে এটা ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গলের কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ছুড়ে ফেলে।
কিন্তু তুই জাহাজটাকে আনবি কীভাবে?
তুই কি মনে করিস, আমাকে ‘সমুদ্রের শিকারি’ শুধু মজা করে বলা হয়? আমি সমুদ্র ফুঁড়ে জাহাজ নিয়ে আসব।
রনের সাথে কী ঘটেছিল, গ্যাব্রিয়েল কেন তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, আর এখন রন কী করার পরিকল্পনা করছে? এসব নিয়ে ভাবছিল রিয়া।
রিয়া, একটু পানি দাও।
রাজ, তুমি শুয়ে থাকো। এতে তোমার ভালো লাগবে।
আমি এখন অনেক ভালো অনুভব করছি।
রিয়া রাজকে পানি দিল। পানি খাওয়ার পর রাজ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল।
জাহাজ চলেনি এখনো?
ইঞ্জিনে কিছু সমস্যা হয়েছে।
যখন আমি অজ্ঞান ছিলাম, তখন কী ঘটেছিল?
হুম। তারপরে গ্যাব্রিয়েল রনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, আর সেই দিনের পর থেকে ব্যালাডোনা দাঁড়িয়ে আছে।
গ্যাব্রিয়েল রনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। মানে যা আমরা করতে চেয়েছিলাম, সেটা গ্যাব্রিয়েল করে দিয়েছে!
কিন্তু রন ফিরে এসেছে।
ফিরে এসেছে? কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? তোমরা রনের কাছে জানতে চাওনি যে সেখানে কী ঘটেছিল এবং গ্যাব্রিয়েল কেন তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল?
আমরা সব জিজ্ঞেস করেছিলাম রাজ, কিন্তু রন কিছুই বলেনি।
ওরকমই সে! একবার আমার হাতে পেলে।
একটা খারাপ খবর আছে, রাজ।
খারাপ খবর?
খারাপ খবর হলো সেথ এখন রনের পক্ষ নিচ্ছে।
আমি আগে থেকেই ওকে বিশ্বাস করতাম না। যাকগে, ছেড়ে দাও। আর বলো তো আদিত্য আর বিলান্দার কার পক্ষ নিচ্ছে?
এখন পর্যন্ত যা দেখেছি, বলা যেতে পারে রন একাই। আদিত্য আর বিলান্দার রনের পক্ষ নেওয়ার ভান করছে।
রিয়া, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব, যাই ঘটুক না কেন।
৪৩
সেঠ এবং আদিত্য ব্যালাডোনার ইঞ্জিন মেরামত করতে ব্যস্ত ছিল। বিলান্দার তার হাতে মানচিত্র নিয়ে পরবর্তী পথ খোঁজার চেষ্টা করছিল, আর রন তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মদের বোতল হাতে নিয়ে মস্ত দাঁড়িয়ে ছিল।
আদিত্য, ইঞ্জিন গিয়ার পুরো বদলাতে হবে, সেঠ বলল।
আমারও তাই মনে হচ্ছে, বাড়তি গিয়ার তো থাকবেই, আদিত্য জবাব দিল।
হ্যাঁ, আছে।
তাহলে নিয়ে এসো, এখানে দাঁড়িয়ে কী দেখছো?
সেঠ গিয়ার আনতে জাহাজের ভেতরে চলে গেল, আর রন বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিল। বিলান্দার তখনও মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে ছিল।
বিলু, এটা ছেড়ে দে, তোর দ্বারা হবে না এগুলো।
রন, তুই স্পিরিচুয়াল জাহাজ সম্পর্কে আর কী জানিস?
কিছুই না।
আমি মজা করার মুডে নেই।
তুই সেই জাহাজের সম্পর্কে এটুকু জেনে রাখ যে, যেদিন সেই জাহাজ আবার সমুদ্রে চলবে, তার ক্যাপ্টেন আমি থাকব।
সপ্ন দেখা ভালো, রন।
আমার সপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি ভালো করেই জানি। রন মদের বোতলটি সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে বলল, বিলু, তুই তোর জীবন নিয়ে চিন্তা করিস না। সমুদ্র তোর পাশে আছে।
বিলান্দার রনকে দেখতেই থাকল, আর রন সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
এই লোকটা কে আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য? সুযোগ পেলেই প্রথমে ওকেই মেরে ফেলব, বিলান্দার ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।
এদিকে রাজ বাইরে এল। প্রথমেই সে দুই হাত উপরে তুলে একবার শরীরটা টানটান করল।
এখন আমার ভালো লাগছে।
তোর ক্ষত কেমন হয়েছে? রন জিজ্ঞেস করল।
রন, শুনেছি গ্যাব্রিয়েল তোকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
গ্যাব্রিয়েল সবসময় বুদ্ধিমান আর সাহসী লোকের ভক্ত। আর এই পুরো ব্যালাডোনায় ও আমাকে ছাড়া আর কাউকেই তেমন দেখেনি।
তোর এই অহংকার আমি খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে ফেলব, রন।
গত কয়েক বছরে তোর মতো অনেকেই এসেছে এবং চলে গেছে। তুই রাগ কন্ট্রোল করতে শেখ, সামনে আরও অনেক দরকার পড়বে।
তুই সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা কর, রন, যখন আমি তোকে মারার সুযোগ পাব। সেদিন তোর অনেক বছরের অপেক্ষা শেষ হবে এবং তোর অহংকারও।
চল, এই আনন্দে দুই পেগ হোক।
পেগে পানি সমুদ্রের হতে হবে। আচ্ছা, পেগের ব্যবস্থা কর।
মালিক, আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী? রনের প্রতিশোধ কীভাবে নেবেন?
ওকে মারার এখন একটাই উপায় আছে। আমি ওকে নিয়ে গিয়ে সেই জায়গায় ফেলব, যেখানে ওর জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। ওরও সেই একই পরিণতি হবে, যেমনটা ওর জাহাজের হয়েছিল।
মালিক, এটা কি সম্ভব? যদি আপনি এটা করতে চান, তবে আবার সেই সমুদ্রের ঘূর্ণিঝড়কে উঠাতে হবে।
এতে কোনো সমস্যা নেই, মর্গান। তোর তো খুশি হওয়া উচিত, রন সেই ঘূর্ণিঝড়ে মারা যাবে।
কিন্তু মালিক, যদি আপনি তা করেন, তবে আপনার শক্তি শেষ হয়ে যাবে।
আমার সঙ্গে তো আমার ড্রাগন সবসময় থাকবে। যদি এই শক্তি চলে যায়, তাতেও আর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমার সবসময় এই আফসোস থাকবে যে সেই প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় এক লোকের জন্য দুবার উঠানো হলো।
আর লিসা? ওর সঙ্গে এখন কী করবেন?
লিসা? ওকে এখন আমাদের প্রয়োজন। সে আমাদের ঢাল হবে। আমি রনকে ভালো করেই জানি, লিসাকে ও কখনো মারবে না। আর আমি রনের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগাব।
মালিক, রন বলছিল যে ওর ড্রাগন আবার ফিরে আসছে।
কিছু লোক খোলা চোখে স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে, কিন্তু রন এমন নয়। ও যদি এটা বলে থাকে, তবে ওর হাতে নিশ্চয়ই কোনো ট্রাম্পকার্ড আছে, যা ও লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমি এখানে তাসের খেলা খেলতে বসিনি।
৪৪
রন, এখন তোর পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
পরিকল্পনা মানে?
মানে, এখন কী করতে যাচ্ছিস সেটা বল।
আমি ভাবছি রিয়ার সঙ্গে আরও একবার সময় কাটাবো কেমন করে।
আমি মজা করছি না!
তোর মনে হচ্ছে এটা মজা! কিন্তু আমি সত্যিই রিয়াকে আবার কাছে পেতে চাই। বিশ্বাস না হলে আমার হৃদয়কে জিজ্ঞেস করে দেখ।
ওরে বোকা, এসব বন্ধ কর, আর বল যে আমাদের এখন কী করা উচিত।
আমাদের কী করা উচিত? হুম, এর মানে তুইও তাই করবি যা আমি করব?
শুধু আমি নয়, সবাই তাই করবে। এখন তাড়াতাড়ি বল।
না না, তোরা কখনোই করতে পারবি না যা আমি করতে যাচ্ছি।
শুধু বল তো, তুই কী করতে যাচ্ছিস। বাকিটা আমাদের উপর ছেড়ে দে।
আরে আদিত্য, তোরা সেটা করতে পারবি না, যা আমি করতে যাচ্ছি।
এর মানে তুই কিছু করতে যাচ্ছিস। তাড়াতাড়ি বল না হলে ওই লোহার রড দেখছিস তো? সেটাই তোকে গেঁথে দেব পেটের মধ্যে।
রনের দৃষ্টি রডের দিকে গেল।
বড় রড বটে, কিন্তু তুই সেটা করতে পারবি না। তবুও যদি সেটা করে ফেলিস, তাতে আমার কিছুই হবে না। এটা তুই ভালো করেই জানিস।
তোর তো ব্যথা লাগবে, তাই না?
খুব বেশি ব্যথা হবে, আর ক্ষত সেরে উঠতে অনেক দিন লাগবে।
যদি আমার মাথা গরম হয়ে যায় আর আমি ওই রড তোর পেটে গেঁথে দিই, তার আগে বল তো, তুই কী করতে যাচ্ছিস।
তোর কিছু অনুভব হয়নি?
না।
আপনার চোখ বন্ধ কর আর কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।
আদিত্য দাঁত ঘষে রনের কথা মেনে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পরেই ব্যালাডোনা নড়ে উঠল, আর পাশে দাঁড়ানো বিলান্দার প্রায় নিচে পড়ে যাচ্ছিল। আদিত্য তাড়াতাড়ি চোখ খুলল।
কিছু বুঝলি?
বুঝলাম! আরে, মনে হচ্ছিল ব্যালাডোনায় কোনও বড় ড্রাগন আঘাত করেছে।
সামনে দেখ।
এটা তো সেই ঘূর্ণিঝড়, যেখানে আমি ডুবে যাচ্ছিলাম! কিন্তু এবার মনে হয় সব শেষ হয়ে গেল।
সেঠ, রাজ আর রিয়া ডেকে এসে চিৎকার করে জানতে চাইল, এখন কী হলো?
আদিত্য বলল, সামনে দেখো।
এটা তো সমুদ্রের ঘূর্ণিঝড় মনে হচ্ছে, রিয়া বলল।
আমার কাছে এর সমাধান আছে। তোমরা এখানেই থাকো, আমি এখনই আসছি।
রন জাহাজের ভেতরে চলে গেল, কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে সবার বুকের ধড়ফড়ানি বেড়েই চলল। ঘূর্ণিঝড়টি কাছে আসছিল এবং আকারেও বড় হচ্ছিল।
রাজ, আমি এটাকে থামানোর চেষ্টা করছি, রাজ বলল।
আদিত্য বাধা দিয়ে বলল, থামা দে, এতে কিছু হবে না। এই ঘূর্ণিঝড় ব্যালাডোনাকে নিয়ে ডুববে।
বোকা বোকা কথা বন্ধ কর। চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকায় কোনও লাভ নেই। বরং আমি চেষ্টা করি, রাজ বলল।
বিলান্দার বলল, আদিত্য ঠিক বলছে, রাজ। এই ঘূর্ণিঝড়ের আর কোনও সমাধান নেই। যদি বাঁচতে চাও, তাহলে আমাদের একমাত্র উপায় হলো ব্যালাডোনা থেকে নিচে ঝাঁপ দাওয়া।
রিয়া বলল, যদি আমরা ব্যালাডোনা থেকে ঝাঁপ দিই, তাও বাঁচতে পারব না। ডেথ আইল্যান্ড এখান থেকে অনেক দূরে। সেখানে পৌঁছানোর আগেই আমাদের প্রাণ বেরিয়ে যাবে।
কোনো নৌকা আছে?
কিছুই নেই এখানে। আর রন গেল কোথায়?
আমি এসে গেছি, প্রিয়তমা। যা-ই বলো, দৃশ্যটা কিন্তু দারুণ!
এটা মজা করার সময় নয়, রন।
আমি মজা করছি না, প্রিয়তমা। আর আদিত্য, তুই একটু আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলি যে আমি কী করতে যাচ্ছি।
তাড়াতাড়ি বল, হয়তো আমাদের জীবন বাঁচানোর একটা উপায় পেয়ে যাব।
আমি এই ঘূর্ণিঝড়ে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছি।
এটা শুনে সবাই বিস্মিত হয়ে রনের দিকে তাকাল।
সেঠ বলল, তোর মাথা ঠিক আছে? তুই জানিস কি, তুই কী বলছিস?
এই ঘূর্ণিঝড় আমাকে উদ্দেশ্য করেই এসেছে। যখনই আমি এতে ঝাঁপ দেব, এটা ফিরে যাবে। আর তোদের জীবন বেঁচে যাবে। শুধু একটা কাজ করবি, কোনওভাবে ব্যালাডোনাকে চালু করে পূর্ণগতিতে ফিরে যাবি।
আর সেই গুপ্তধন যার জন্য আমরা এখানে এসেছি, তার কী হবে?
জীবনের চেয়ে গুপ্তধন বেশি প্রিয়? যা বলেছি, তাই কর, নাহলে সবাই মরবে।
সবাই অবাক হয়ে রনের দিকে তাকিয়ে রইল। কারও মুখে কোনও কথা নেই যা রনকে থামাতে পারে। যে রনকে সবাই স্বার্থপর বলত, আজ সবাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য স্বার্থপর হয়ে পড়ল।
রিয়া বলল, রন, তুমি জানো তো তুমি কী করতে যাচ্ছ?
রন, এই সমুদ্রের গভীরতা থেকে আজ পর্যন্ত কেউ বেঁচে ফিরে আসেনি। এই ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে জাহাজে থাকা প্রত্যেকটি মানুষ মারা যাবে।
রন বলল, তুমি চিন্তা করো না, প্রিয়তমা। আমি এই ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করতে পারব। তোমরা সবাই জাহাজ নিয়ে এগিয়ে যাও। সমুদ্রের শিকারিকে সমুদ্র ডুবাতে পারবে না। শুধু আমার নাম মনে রেখো। দ্য রন!
ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ কাছে আসতে লাগল। সবাই রনের দিকে তাকিয়ে ছিল।
যাওয়ার আগে আমি তোমাদের সঙ্গে একবার করে জড়িয়ে নিতে চাই।
সবাইকে জড়িয়ে নেওয়ার পর রন সমুদ্রে ঝাঁপ দিল। আর তাড়াতাড়ি সেই প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়ে ঢুকে পড়ল। সবাই রন ও ঘূর্ণিঝড়কে দেখতে লাগল। ঘূর্ণিঝড় আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে লাগল। ব্যালাডোনার ডেকে দাঁড়িয়ে সবাই সেই ঘূর্ণিঝড়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
রিয়া-সে চলে গেছে।
রাজ-এটা তো হওয়াই ছিল, সমুদ্রের শিকারিকে শেষ পর্যন্ত সমুদ্রই গিলে খেল।
আমার আশা, তার চেহারা আমরা আর কখনো দেখব না।
সেঠ-এক মিনিট দাঁড়াও। আমরা এত স্বার্থপর হতে পারি না। আমাদের রনকে খুঁজতে যাওয়া উচিত। কে জানে, হয়তো সে ঝড় থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।
বিলান্দার-সে বাঁচবে না।
তোর কীভাবে জানা গেল যে সে বাঁচবে না।
একবার বলেছি না, বাঁচবে না, তো কথাটা সেখানেই শেষ।
শালা, জংলি কোথাকার।
তুই কী বললি? বিলান্দার রাগে সেঠের দিকে এগিয়ে গেল, পরিবেশের উত্তেজনা বুঝে আদিত্য বিলান্দারকে ধরে ফেলল।
ছেড়ে দে আদিত্য, এ শালায় আমাকে জংলি বলেছে। এখনই দেখাচ্ছি আমি কী জিনিস।
তুই আমাকে দেখাবি। তাহলে সামনে কেন এলি না, ভয় পেয়ে গেলি?
শালা, আজ তুই মরে গেলি।
রাজ-চুপ করো তোমরা দু’জন, না হলে দু’জনকেই সমুদ্রে ফেলে দেব।
সেঠ-আমাকে বোল না রাজ, আমি ব্যালাডোনা’র ক্যাপ্টেন। এই শালা জংলিকে নিচে ফেলে দে।
তুই আবার আমাকে জংলি বললি। বিলান্দার নিজেকে আদিত্যর হাত থেকে ছাড়িয়ে সেঠের দিকে এগিয়ে গেল।
আয়, জংলি।
সেঠও বিলান্দার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু তাদের মারামারি শুরু হওয়ার আগে রাজ তাদের দুজনের ঘাড় ধরে তুলে ফেলল।
তোমরা দু’জন এখন শান্ত হবে কি না।
বিলান্দার আর সেঠের শ্বাস বন্ধ হতে শুরু করেছিল, দু’জনই সংকীর্ণ স্বরে বলল যে তারা আর লড়াই করবে না। রাজ তাদের নিচে ফেলে দিয়ে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
আমার শক্তি দিনে দিনে বাড়ছে।
৪৫
রন ঝড়ের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল। রনের মাথা ঘুরতে শুরু করেছিল এবং তার অতীতের কিছু মুহূর্ত তার চোখের সামনে ফুটে উঠতে লাগল।
যখন রন ছোট ছিল এবং গ্যাব্রিয়েল যুবক হয়ে উঠছিল, তখন তারা দু’জন তাদের পরিবারের সঙ্গে একটি আইল্যান্ডে বাস করত। তখনই রন আর গ্যাব্রিয়েল একদিন আইল্যান্ডে ঘুরতে বের হয়।
গ্যাব্রিয়েল-মার্টিন, দেখে চল, এখানে কোনো পশু লুকিয়ে থাকতে পারে।
আমি এই ড্রাগনগুলোকে ভয় পাই না।
সত্যিই ভয় পাস না, না আমাকে সাহস দেখানোর চেষ্টা করছিস?
ভাইয়া, তুমি এসব ছেড়ে দাও, আর বল আমার কাঁধে থাকা এই চিহ্নের মানে কী।
গ্যাব্রিয়েল, সামনের দিকে হাঁটছিল, কিন্তু চিহ্নের কথা শোনার পর সে থেমে গেল।
তুই কী বললি?
আমার কাঁধে থাকা এই চিহ্নের মানে কী। আমি কি তোমাদের মতো ড্রাগন হোল্ডার?
এটা অসম্ভব। গ্যাব্রিয়েল দৌড়ে মার্টিনের কাছে এল এবং তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। এটা কখনোই হতে পারে না।
কী হতে পারে না, ভাইয়া?
তুই মায়ের কাছে এই চিহ্নের মানে জানতে চেয়েছিস?
মা বলেছিল আমি একদিন একজন মহান যোদ্ধা হব এবং একদিন আমার কাছে তোমার থেকেও বেশি শক্তি থাকবে। কিন্তু মা এটাও বলেছিলেন যে, আমি তোমাকে এসব কিছু বলব না।
আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। গ্যাব্রিয়েল চিৎকার করতে করতে মার্টিনকে তুলে দূরে ছুড়ে ফেলল।
মার্টিন, তুই কিছুক্ষণ আগে বলেছিলি যে তুই ড্রাগনদের ভয় পাইস না। গ্যাব্রিয়েল এ কথা বলতেই অনেক ড্রাগন সেখানে এসে হাজির হয়।
মেরে ফেল, এই সাপটাকে শেষ করে দে, না হলে আজ তোদের ভালো হবে না। গ্যাব্রিয়েল বলেই বাড়ির দিকে ফিরে চলল। সে তার তলোয়ার তুলে নিয়ে সোজা বাড়ি এসে প্রথমে তার বাবার মাথা কেটে ফেলল। তারপর দ্রুত ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল।
মা, তুমি কোথায়।
গ্যাব্রিয়েলের মা ঘরের ভেতরে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে ছিলেন। গ্যাব্রিয়েলের ডাক শুনে তিনি তাকে ঘরে আসতে বললেন। গ্যাব্রিয়েল তার বাবার রক্তমাখা তলোয়ার নিয়ে সোজা তার মায়ের ঘরে ঢুকে পড়ল।
অন্যদিকে, মার্টিন ড্রাগনদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আইল্যান্ডের জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের দিকে দৌড়াতে লাগল। কিন্তু তার পা একটি পাথরে ঠেকে গেল, আর সে পড়ে গেল। মার্টিন উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। ভয়ে সে তার চোখ বন্ধ করে ফেলল। ঠিক তখনই তার চোখের সামনে কিছু একটা জ্বলে উঠল। সে ধীরে ধীরে তার চোখ খুলল। এবং দেখল তার কাঁধে থাকা চিহ্ন থেকে একটি তীব্র আলো বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সেই চিহ্নটি পোড়া শুরু করল। সব ড্রাগন, যারা মার্টিনকে মারার জন্য এসেছিল, তাদের চোখে আতঙ্ক ফুটে উঠল এবং তারা সবাই সেখান থেকে পালিয়ে গেল, একটি ড্রাগন ছাড়া। সেই ড্রাগন ধীরে ধীরে মার্টিনের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। যতটা সে এগিয়ে যাচ্ছিল, মার্টিনের শ্বাস ততই দ্রুত হয়ে আসছিল। এখন ড্রাগন একেবারে মার্টিনের কাছে এসে পৌঁছেছে এবং কখনো মার্টিনের দিকে, কখনো তার কাঁধের চিহ্নটির দিকে তাকাচ্ছিল। মার্টিন ড্রাগনের চোখে সেই পোড়া চিহ্নের শিখা দেখতে পেল। এবং তারপর মার্টিন যা দেখল, তা বিশ্বাস করতে পারছিল না। ড্রাগনটি ধীরে ধীরে তার রঙ বদলাতে লাগল। ড্রাগনটি পুরোপুরি একটি সাদা ড্রাগনে পরিণত হলো। এবং তার পরের মুহূর্তে, মার্টিন অনুভব করল যে সে সাদা ড্রাগনটিকে বুঝতে পারছে। মার্টিন ভয়ে ভয়ে ড্রাগনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল। আমাকে আমার মা আর বাবার প্রাণ বাঁচাতে হবে।
ড্রাগনটি যেন মার্টিনের কথা বুঝতে পেরেছিল, একদম শান্ত হয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমাকে আমার মা এবং বাবার প্রাণ বাঁচাতে হবে। তুমি কি বুঝতে পারছ আমি কী বলতে চাইছি? বলেই মার্টিন ভয়ে ভয়ে সেই সাদা ড্রাগনটিকে আদর করল। ড্রাগনটি হতবাক হয়ে গেল এবং মার্টিনকে তুলে আকাশে উড়ে গেল।
এটা আমার বাড়ির রাস্তা নয়! মার্টিন চিৎকার করে বলল। জবাবে ড্রাগনটি মার্টিনকে উঁচুতে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। মার্টিন নিচে পড়তে লাগল।
বাঁচাও.!
মার্টিন দ্রুত নিচে পড়ছিল, আর তার পিছু নিয়েছিল সেই ড্রাগনও। হঠাৎ করে সেই সাদা ড্রাগনের ডানা ছিঁড়ে পড়তে শুরু করল এবং কিছুক্ষণ পর সেগুলো মার্টিনের কাঁধে এমনভাবে যুক্ত হয়ে গেল, যেন মার্টিন জন্ম থেকেই সেই ডানাগুলো নিয়ে এসেছে। মার্টিন আকাশে উড়তে শুরু করল।
এটা তো অবিশ্বাস্য! উহহহহহো। আমি উড়তে পারি, বিশ্বাস করতে পারছি না!
সেই সাদা ড্রাগন সরাসরি এসে মার্টিনের সঙ্গে ধাক্কা খেল। ড্রাগনের ভার মার্টিন ধরে রাখতে পারল না এবং নিচে পড়ে গেল। তবে উঠতে গিয়ে মার্টিন দেখল যে, তার হাত ও পায়ে ড্রাগনের মতো আবরণ জমে গেছে। মার্টিন তার শরীরের উপর দিয়ে হাত বুলাতে লাগল।
এটা তো সত্যিই অসাধারণ! চলো, বন্ধু, এখন আমাদের কাজটা শেষ করি।
বেটা গ্যাব্রিয়েল, তুমি এত রাগে কেন?
তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে মা, তুমি বলেছিলে মার্টিন সাধারণ একটা ছেলে। তুমি আমাকে এটাও বলেছিলে যে মার্টিনের কাঁধের দাগ কয়েকদিনের মধ্যে মিলিয়ে যাবে। আমি কি ভুল বলছি?
গ্যাব্রিয়েলের হাতে রক্তমাখা তলোয়ার দেখে তার মা বুঝতে পেরেছিলেন যে গ্যাব্রিয়েল রাগের বশে তার বাবাকে হত্যা করেছে।
গ্যাব্রিয়েল, তুমি তোমার বাবাকে মেরে ফেলেছ। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন।
তুমি একদম ঠিক বুঝেছ। এখন তোমার পালা।
কিন্তু কেন?
তুমি জানতে চাও কেন আমি তাকে মেরেছি? গ্যাব্রিয়েল তার মাকে বিছানা থেকে টেনে নামিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিল, তোমার কারণেই আমি আমার বাবাকে হত্যা করেছি। যদি তুমি আমাকে মিথ্যে না বলতে। কিন্তু এখন আর এসবের কোনো মানে নেই মা, সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।
গ্যাব্রিয়েল, নিজেকে সামলাও।
সামলাতে হবে তো তোমাকে। তুমি আমাকে আগে কেন বলনি যে আমার ছোট ভাইও ড্রাগন হোল্ডার? এই সমুদ্রে আমার শাসন হবে, অন্য কারোর নয়। এখন যদি সেই শাসনের পথে আমার মা-বাবা বা আমার ভাই আসে, তাও আমি থামব না। আর এর শুরুটা তো হয়ে গিয়েছে।
গ্যাব্রিয়েল তার তলোয়ার তুলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই মার্টিন ড্রাগন হোল্ডারের রূপে সেখানে এসে হাজির হল।
থামো ভাইয়া। এমন কিছু করতে পার না।
তুই এখনো বেঁচে আছিস। ওহ, তোর ড্রাগনও তো সঙ্গে আছে!
মার্টিন সময় নষ্ট না করে গ্যাব্রিয়েলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দুজনেই ঘর থেকে বাইরে গিয়ে পড়ল। ড্রাগন ছাড়া গ্যাব্রিয়েল মার্টিনের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ল এবং খুব দ্রুতই সে পরাজিত হল।
এটা বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ। বলেই মার্টিন গ্যাব্রিয়েলের তলোয়ার তুলে নিল। কিন্তু মার্টিন গ্যাব্রিয়েলকে হত্যা করতে পারল না। তার হাত কাঁপতে লাগল।
আমি তোমার মতো নই।
তুই দুর্বল, মার্টিন।
মার্টিন তার দুই হাত তুলে গ্যাব্রিয়েলকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিল।
মার্টিন।
মার্টিন কাঁদতে কাঁদতে তার মায়ের কাছে পৌঁছাল, মা, তোমার কিছু হবে না।
মার্টিনের মা তার ড্রাগন-যুক্ত শরীর স্পর্শ করতে করতে বললেন, তোমার ড্রাগন তোমাকে খুঁজে পেয়েছে, বেটা। এখন এখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যাও। গ্যাব্রিয়েল আবার ফিরে আসবে।
মার্টিনের মা এতটুকু বলার পরেই সারা ঘরে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়তে লাগল। ড্রাগন মার্টিনকে ছেড়ে চলে গেল, আর মার্টিন সেই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে ডেথ আইল্যান্ডে পৌঁছে গেল।
রন দেখল যে সে ঝড়ের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। রন তার চোখ খোলার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। ঝড় এখন শান্ত হয়ে গিয়েছিল। রন অনুভব করল যে সে সমুদ্রের পৃষ্ঠে পৌঁছে গেছে। সেখানে খুব অন্ধকার ছিল।
আমি জানতাম এখানে এমনই অন্ধকার থাকবে, তাই আমি ব্যালাডোনা থেকে টর্চ নিয়ে এসেছি, রন নিজেই নিজেকে বলল। এরপর সে টর্চ নিয়ে এগোল। টর্চের আলোতে তার চোখে এক ঝলক স্পিরিচুয়াল শিপের দেখা মিলল।
আমার জাহাজ পেয়ে গেছি! পৃথিবীর মানুষেরা, ক্যাপ্টেন মার্টিনকে ক্ষমা করো। ক্যাপ্টেন দ্য রন ফিরে এসেছে! নিজেকে বাহবা দিতে দিতে রন স্পিরিচুয়াল শিপের দিকে এগিয়ে গেল।
৪৬
বিলান্দার- রাজ, তোর দুইটা মানচিত্র দেখাও তো।
এখন মানচিত্র নিয়ে তুই কী করবি?
আমি চাই আমাদের কাছে এমন কোনো জিনিস না থাকে যেটা দিয়ে গ্যাব্রিয়েল আবার আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে।
বিলান্দার আর রাজ দুজনেই নিজেদের পকেটে হাত দিল, কিন্তু মানচিত্র কোনোভাবেই তাদের কাছে ছিল না।
আরে রাজ, মানচিত্র তো আমার কাছে নেই!
আমার কাছেও নেই!
রাজ- রিয়া, তোমার কাছে যে মানচিত্র ছিল সেটা নিয়ে আসো।
রিয়া দৌড়ে ব্যালাডোনার ভেতরে গেল এবং কিছুক্ষণ পরে ফিরে এল।
রাজ, মানচিত্রটা ওখানেও নেই।
রাজ- একটু থামো, তোমার মনে আছে রন ঝড়ে ঝাঁপ দাওয়ার আগে ব্যালাডোনার ভেতরে গিয়েছিল এবং সে আমাদের সঙ্গে বিদায়ও জানিয়েছিল।
এর মানে হল সেই শয়তান মানচিত্র চুরি করেছে, আর আমরা টেরও পাইনি!
মর্গান- মালিক, রন তো ঝড়ে হারিয়ে গেছে, কিন্তু সে মরবে না।
আমি জানি মর্গান, রন কোনো না কোনোভাবে বেঁচে যাবে। তবে আমি ঝড়ের মাধ্যমে যা জানতে চাইছিলাম, সেটা আমি জেনে গেছি।
মালিক, আপনি কী জানতে চাইছিলেন?
আমি এখনো স্পষ্টভাবে মনে করতে পারছি, যখন রন আমাদের বন্দী ছিল, তখন সে আমাকে বলেছিল যে তার ড্রাগন এখনো বেঁচে আছে। যদি তা সত্য হত, তার ড্রাগন তাকে ঝড় থেকে বাঁচাতে অবশ্যই আসত। কিন্তু সেটা আসেনি, এর মানে রন এখন একা।
আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী, মালিক?
পরবর্তী পরিকল্পনা। গ্যাব্রিয়েল হাসতে শুরু করল, ড্রাগনের সেনা নিয়ে এসে সবাইকে শেষ করে দাও!
মালিক, আপনার জন্য রনই একমাত্র হুমকি, বাকি লোকগুলো নয়। তাহলে আপনি তাদের কেন মারতে চান? লিসা, যে তখনই সেখানে এসেছে, মালিককে জিজ্ঞেস করল।
লিসা, যাদের কথা তুমি বলছ, তারাই রনের সাহায্য করেছে। তারাই আমাদের অনেক সঙ্গীকে হত্যা করেছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, আর মৃত্যু এখন সবারই হবে। মর্গান, দ্রুত আক্রমণের প্রস্তুতি নাও। জয় আমাদের হবে!
মর্গান সেখান থেকে চলে গেল। মর্গান চলে যাওয়ার পর গ্যাব্রিয়েল লিসার দিকে এগিয়ে এল এবং তার কাঁধে হাত রেখে বলল, লিসা, যদি তুমি ড্রাগন হোল্ডার হতে তাহলে কী করতে?
যদি আমি ড্রাগন হোল্ডার হতাম, তাহলে আমি কী করব জিজ্ঞাসা করতাম না। সোজা গিয়ে রনের বুকে সেই ছুরি বসিয়ে দিতাম, যেটা সে দাওয়ানের বুকে বসিয়েছিল।
গ্যাব্রিয়েল তার হাত উপরে তুলল, দ্রুত এক ছুরি তার হাতে এসে গেল।
এই নাও লিসা, সেই ছুরি। এটাই সেই ছুরি, যেটা দিয়ে রন দাওয়ানকে হত্যা করেছিল। আর দ্বিতীয় ব্যাপার, আমি তোমাকে ড্রাগন হোল্ডার বানাতে পারি।
লিসা ছুরিটা হাতে নিয়ে সেটিকে স্পর্শ করে বলল, এটা কি সত্যিই সম্ভব?
ড্রাগন হোল্ডারদের থামানোর জন্য অনেক বছর আগে একটি মন্ত্র তৈরি করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে যে কেউ যেকোনো ড্রাগনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ড্রাগন হোল্ডার হতে পারত। সেই ড্রাগনের সমস্ত শক্তি সেই ব্যক্তির মধ্যে চলে আসত, যিনি সেই মন্ত্র পাঠ করতেন। আর আমি সেই মন্ত্র জানি।
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, মালিক, যে আমিও ড্রাগন হোল্ডার হতে পারি।
কিন্তু এতে বিপদও আছে লিসা। তুমি কিছু সময়ের জন্যই ড্রাগন হোল্ডার হতে পারবে। আর যখন ড্রাগন তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, সে তোমার প্রাণ নেওয়া থেকে পিছপা হবে না। কারণ কোনো ড্রাগনই চায় না যে কেউ তাকে শাসন করুক।
তাহলে কি আপনার ড্রাগনও আপনাকে আক্রমণ করে?
আমি জন্মগতভাবে ড্রাগন হোল্ডার, লিসা। আমার জন্য কোনো বিপদ নেই।
আমার মঞ্জুর আছে। খুব ভালো, এবার রনের সামনে এক নয়, তিন তিনটি ড্রাগন হোল্ডার থাকবে।
তৃতীয় জন কে?
মর্গানকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
৪৭
রাজ ব্যালাডোনায় পায়চারি করতে করতে রনকে গালাগাল দিচ্ছিল। শালা চোর কোথাকার। মরার সময়েও নিজের আসল চেহারা দেখিয়ে দিল। যেন গুপ্তধন আমাদের না পেয়ে যায়, তাই সেই নকশা নিজের সঙ্গে নিয়ে চলে গেল।
আদিত্য-তুই কি সত্যিই ভাবিস রন মরে গেছে?
সে তো গেছে, আর যদি তুই তার পক্ষ নিবি, তবে তোকে ওর কাছেই পাঠিয়ে দেব।
এই শোন! এই শক্তির অহংকার অন্য কোথাও দেখাবি। এবার তোকে ঠান্ডা করে দেব।
প্রতিবারের মতো এবারও রিয়া মধ্যস্থতা করে রাজকে শান্ত করল। আর আদিত্যকে সেখান থেকে চলে যেতে বলল।
আদিত্য-আমার কাছে এক বোতল শেষ মদ আছে। যে খেতে চায় সে আমার সঙ্গে চল। এই উলু, নকশা তো রনের জন্যই চলে গেল। এই বোতলই খালি করে দে।
বিলান্দার বোতলের দিকে তাকিয়ে ভাবল আর তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াল। আমি আসছি। বিলান্দার আর আদিত্য সেখান থেকে চলে গেল। ঠিক তখন সেঠ চিৎকার করে উঠল। সামনে দেখো, গ্যাব্রিয়েল তার ড্রাগন বাহিনী নিয়ে আসছে।
রিয়া-এটা অনেক বড় বাহিনী, এখন কী করব?
সামনে থেকে একটা ড্রাগন এসে ব্যালাডোনার সঙ্গে ধাক্কা খেল। ব্যালাডোনার সামনের অংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল।
রাজ-প্রাণ বাঁচাতে হলে। রাজ বলতে বলতে থেমে গেল।
তুমি থেমে গেলে কেন, বলো দ্রুত, আমাদের কী করতে হবে?
রাজের গলা আটকে গিয়েছিল, সে সামনে ইশারা করল।
লিসা-এখানে তো তিন তিনটি ড্রাগন হোল্ডার রয়েছে। সবাই নিচে ঝাঁপ দাও।
রাজ, লিসা আর সেঠ নিচে ঝাঁপ দিল, কিন্তু বিলান্দার আর আদিত্য ব্যালাডোনার অন্য অংশে বসে মদ খাচ্ছিল। বিলান্দার-এই তুই কোনো আওয়াজ শুনেছিস?
তোর মাথা ঘুরছে রে, এখানে সবকিছু একদম শান্ত।
ঠিক তখনই গ্যাব্রিয়েল তার বিশাল কুঠার ব্যালাডোনায় আঘাত করল। আর নিজের শক্তি দিয়ে ব্যালাডোনাকে ধ্বংস করতে লাগল।
লিসা আর মর্গান, তোমরা ওদের মেরে ফেলো যারা ব্যালাডোনা থেকে নিচে লাফিয়েছে। আমি ওদের জাহাজ ধ্বংস করি। এ কথা বলেই গ্যাব্রিয়েল আকাশে উড়ে গেল এবং দ্রুত গতিতে ফিরে এসে ব্যালাডোনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ব্যালাডোনা পুরোপুরি ভেঙে গেল।
আদিত্য-এই তুই কেন মনে হচ্ছে আমরা নিচে নামছি।
তোর মাথা ঘুরছে রে, আমরা নিচে যাচ্ছি না, সমুদ্রের পানি উপরে উঠছে। ঠিক তখনই ওরা সমুদ্রের ভেতর কিছু শব্দ শুনতে পেল।
এই তুই কিছু শুনেছিস? আমার মনে হচ্ছে আমরা স্বপ্ন দেখছি। আর ওই যে সামনের লোকটা দাঁড়িয়ে আছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে ও গ্যাব্রিয়েল। কিন্তু ও গ্যাব্রিয়েল না।
হাতটা দে। তোমাদের কোনো শেষ ইচ্ছা আছে? গ্যাব্রিয়েল ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল।
এই লোকটার গলা গ্যাব্রিয়েলের মতো শোনাচ্ছে। মনে হচ্ছে মদটা খুব তীব্র। বিলান্দার মদের বোতলটা চুমু খেতে খেতে বলল।
ঠিক তখন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ব্যালাডোনা জাহাজটা খুব খারাপভাবে কেঁপে উঠল। গ্যাব্রিয়েলও একবার ভয় পেয়ে গেল কী হচ্ছে দেখে। রাজ আর রিয়াকে মর্গান আর লিসা ধরে ফেলেছিল এবং তাদের মারার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল। ঠিক তখনই সমুদ্র ফুঁড়ে একটা জাহাজ বেরিয়ে এল। সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। সেটা একটা আত্মিক জাহাজ। ব্যালাডোনার চেয়ে দ্বিগুণ বড় এবং অনেক চওড়া। আত্মিক জাহাজের সামনে তীক্ষ্ণ অংশে মৃত্যুর চিহ্ন আঁকা ছিল। সেই জাহাজ পুরোপুরি কালো কাপড়ে ঢাকা। ধীরে ধীরে জাহাজটা পুরোপুরি সমুদ্রের ওপরে বেরিয়ে এল। সবার চোখ সেই জাহাজের দিকে আটকে রইল। ঠিক তখনই রন বাইরে এল। তার গলায় সোনার একটা মালা ঝুলছিল এবং সে তার আঙুলে অনেক সোনার আংটি পরেছিল।
দেখ কাল্লু, কখনো এই সোনা দেখেছিস?
মর্গান গ্যাব্রিয়েলের দিকে তাকাল। গ্যাব্রিয়েল মর্গানকে শান্ত থাকতে ইশারা করল। সুযোগ বুঝে আদিত্য আর বিলান্দার নিচে ঝাঁপিয়ে আত্মিক জাহাজের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।
গ্যাব্রিয়েল-আমি জানতাম তুই ফিরে আসবি। কিন্তু এভাবে আসবি সেটা ভাবিনি।
তারিফের জন্য ধন্যবাদ।
ওদের দু’জনকে কেটে ফেলো, আমি এটার সঙ্গে লড়াই করব। মর্গান আর লিসা।
রিজ আর রিয়াকে মারার আগে রন দুটো ছুরি তাদের দিকে ছুড়ে দিল। রনের নিশানা নিখুঁত ছিল, সেই ছুরি সরাসরি গিয়ে মর্গান আর লিসার বুকে বিঁধল। প্রথমে রাজ নিজেকে ছাড়ালো আর পরে রিয়াকে তাদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আত্মিক জাহাজের দিকে দ্রুত এগিয়ে গেল। সেঠ, বিলান্দার আর আদিত্য আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল।
রাজ-তুই নকশা চুরি করেছিস।
না, একদমই না। আমার কাছে কোনো নকশা নেই।
মিথ্যে বলিস না।
ঠিক তখনই একটা ড্রাগন দ্রুত তাদের দিকে এগিয়ে এল এবং বিলান্দারকে ধরে উড়ে গেল।
রন-দেখলি তোর বাজে কথার ফলাফল।
রন দ্রুত বন্দুক বের করে ড্রাগনের দিকে তাক করল। আগুনের তীব্র শিখায় বিলান্দারকে সেই ড্রাগন থেকে মুক্ত করে দিল। বিলান্দার সোজা সমুদ্রে গিয়ে পড়ল।
এই, এইটা ধর, তাড়াতাড়ি আয়, আমার সবার দরকার। রন একটা দড়ি তার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল।
লিসা আর মর্গান তাদের বুকে গাঁথা ছুরি বের করে নিল। লিসা সেই ছুরি রনের দিকে ছুড়ল। কিন্তু লিসার নিশানা রনের মতো ছিল না, ছুরিটা রনের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
লিসা-রন, আমরাও এখন ড্রাগন হোল্ডার। আর যদি তুই আমাদের মারতে চাস, তবে তোকে ড্রাগনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ড্রাগন হোল্ডার হতে হবে। কিন্তু আফসোস, তোর কাছে ড্রাগনই নেই।
কে বলল আমার কাছে ড্রাগন নেই, নিশ্চিতভাবেই গ্যাব্রিয়েল বলেছে। কিন্তু কিছু মনে করিস না, আমার জান, তার মাথায় বুদ্ধি একটু কম। সে এইটা ভাবেনি যে, যে মন্ত্র দিয়ে তোকে আর ওই বাজে কাল্লুকে ড্রাগন হোল্ডার বানিয়েছে, আমি একই মন্ত্র ব্যবহার করে সবাইকে ড্রাগন হোল্ডার বানাতে পারি।
রাজ-তুই সত্যিই এটা করতে পারিস।
এবার বিশ্বাস করবি তো।
ততক্ষণে বিলান্দার সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। রাজকে বাদ দিয়ে সবাই যে কোনো এক ড্রাগনের ওপর ঝাঁপ দাও, আর আমি তোমাদের যে মন্ত্র বলব সেটা উচ্চারণ করলেই তোমরা ড্রাগন হোল্ডার হয়ে যাবে।
আমি কেন ড্রাগন হোল্ডার হতে পারব না। আমি এদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য।
তুই এ জন্য ড্রাগন হোল্ডার হতে পারবি না কারণ তোর মাথায় ঘিলুর অভাব আছে। আগে আমার কথা শেষ হতে দে। যখন কাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন সেই মন্ত্রটা উল্টো করে পড়িস, ফের মানুষ হয়ে যাবি। এখন যা, কেমন করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস।
গ্যাব্রিয়েল তার হাত উপরে তুলে কিছু বলল, যার ফলে হাজার হাজার ড্রাগন আত্মিক জাহাজে হামলা চালিয়ে দিল।
রন মন্ত্র জিজ্ঞেস করে প্রথমেই এক ড্রাগনের উপর লাফিয়ে উঠল এবং দেখতে দেখতে সে ড্রাগন হোল্ডার হয়ে গেল।
আদিত্য-বিলু, প্রথমে তুই যাবি, না আমি যাব?
আমার মনে হয় তোকেই প্রথমে যেতে হবে।
রন- সময় নষ্ট করিস না। তোমরা দুজন একসঙ্গে যাও, কিন্তু ভুলেও গ্যাব্রিয়েল, মরগ্যান, আর লিসার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ো না। ড্রাগনদের সেনাবাহিনীর খেলা শেষ করো।
আদিত্য এবং বিলান্দারও ড্রাগন হোল্ডার হয়ে গেল। কিন্তু রিয়া থেমে গেল, সে দৌড়ে রাজের কাছে গিয়ে তাকে চুমু খেতে শুরু করল।
রিয়া- আমি তোমাকে ভালোবাসি, রাজ।
রন- তুই আমার হৃদয় ভেঙে দিলি। কষ্টে মন মরে গেল, তো প্রিয়, এখন তোমার পালা, প্রস্তুত হও।
তুমি এখানে থেকে কী করবে। যুদ্ধ করতে ভয় পাচ্ছ না তো।
রন রিয়াকে ধরে তুলে একটা আসন্ন ড্রাগনের উপর ছুড়ে দিল, কিন্তু রিয়া নিচে পড়ে গেল। সেথ দ্রুত উড়ে এসে রিয়াকে তুলে নিয়ে চলে গেল। রনের এই কাজ দেখে গ্যাব্রিয়েল হাততালি দিয়ে বলল।
রন, তুই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু আমি জানতে চাই, তুই সেই মন্ত্র কোথা থেকে পেলি?
এই জাহাজেই পেয়েছি। আর কোনো প্রশ্ন?
তুই এখনও যুদ্ধে ভয় পাস। তাই অন্যদের পাঠিয়ে দিলি, কিন্তু তুই নিজে গেলি না।
রিয়া, আমি তোমারে একটা ড্রাগনের উপর ছুড়ে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি সেই মন্ত্রটা বলে দিব।
এক মিনিট থামো, আমি এখনও প্রস্তুত না।
চুলোয় যাও। বলে সেথ রিয়াকে ছুড়ে দিল।
গ্যাব্রিয়েল- আজ যুদ্ধ থেকে পালাস না, রন। হয় আমাকে হারিয়ে দে, নয়তো শহীদ হয়ে যা।
আমার প্রথম প্রস্তাবটা বেশ ভালো লাগছে।
রিয়া, সেথ, আদিত্য এবং বিলান্দার সবাই ড্রাগন হোল্ডারে পরিণত হল এবং আত্মিক জাহাজের উপরে গিয়ে দাঁড়াল। তাদের সামনে হাজার হাজার ড্রাগন গ্যাব্রিয়েলের সংকেতের অপেক্ষায় ছিল।
বিলান্দার- রন, তুই তোর জাহাজ নিয়ে চিন্তা করিস না। আমি একাই এই বদমাশদের শেষ করে দেব।
যদি আমার এই জাহাজের কিছু হয়, তো সবাইকে সমুদ্রে কবর দেব। ড্রাগনরা কখনো খালি জাহাজে হামলা করে না, তাই ভুলেও এই জাহাজে যাস না।
রিয়া- তুমি আমাদের ড্রাগন হোল্ডার বানিয়ে দিয়েছো। কিন্তু তুমি নিজে কি করবে। এখানে বসে আমাদের যুদ্ধ দেখবে?
ভাল চিন্তা, কিন্তু আমি যুদ্ধ করব, আমার ড্রাগনের সঙ্গে। কখনো সাদা ড্রাগন দেখেছ?
না।
তাহলে আজ দেখে নিস।
গ্যাব্রিয়েল- রন, যুদ্ধ শুরু করা যাক।
এক মিনিট, যুদ্ধ শুরুর আগে আমি কিছু স্পষ্ট করতে চাই। একদিকে তোমরা তিনজন ড্রাগন হোল্ডার আর ড্রাগনের শক্তিশালী বাহিনী। আর অন্যদিকে আমি, ক্যাপ্টেন দ্য রন, একা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়ব আর একে একে সবাইকে শেষ করব। হ্যাঁ, যদি কেউ আমার পা ধরে প্রাণ ভিক্ষা করে, তবে আমি আমার মত পাল্টাতে পারি।
গ্যাব্রিয়েল- অনেক হয়েছে।
এতটুকু বলা মাত্রই ড্রাগনের বাহিনী আত্মিক জাহাজের চারপাশে ঘুরতে শুরু করল।
রন- সবাই যাও। ড্রাগনের বাহিনীকে শেষ করে দাও আর যদি জীবন প্রিয় হয়, তাহলে ভুলেও গ্যাব্রিয়েল, মরগ্যান আর লিসার সাথে একা লড়তে যেও না। এখন যাও কাপুরুষরা, আমার মুখের দিকে কী দেখছ?
রন চিৎকার করতেই সবাই আকাশে উড়ে গেল, কিন্তু রিয়া রয়ে গেল।
রিয়া- তোমার সাদা ড্রাগন কোথায়? কোথাও তো দেখতে পাচ্ছি না। তুমি কি পালাতে চাচ্ছ?
রিয়া এতটুকু বলতে পেরেছিল, যে একটা ড্রাগন তাকে তুলে নিয়ে উপরে টেনে নিয়ে গেল।
আমার ড্রাগন আমার সামনেই আছে। রন রাজের দিকে ইঙ্গিত করে বলল।
তুই পাগল! আমি তো মানুষ।
তোর কাঁধে যে চিহ্ন রয়েছে, কখনো তা লক্ষ্য করিসনি, তা এক ড্রাগনের চিহ্ন।
গ্যাব্রিয়েল- কিন্তু আমি তো তোর ড্রাগনকে নিজের হাতে মেরেছিলাম।
গ্যাব্রিয়েল। ড্রাগন, যতক্ষণ ড্রাগন হোল্ডারের সাথে যুক্ত না থাকে, ততক্ষণ কোনো ড্রাগন মারা যায় না। যখন তুই আমার সাদা ড্রাগনকে মেরেছিলি, তখন সেটা আমার থেকে আলাদা ছিল। আর তার ক্ষমতার কারণে আমার ড্রাগন মানুষ হয়ে নতুন করে জন্ম নেয়।
রাজ- এসব বাজে কথা।
এটা একদম সত্যি। আমি তো তোকে অনেক আগেই চিনতে পেরেছিলাম। এখন সময় এসে গেছে, তোকে আবার ড্রাগনের রূপ নিতে হবে।
চুপ কর, না হলে তোকে মেরে ফেলব।
এই কথা? রন তার পোশাক খুলে নিজের কাঁধের চিহ্ন রাজের দিকে দেখাল। রনের কাঁধের চিহ্ন দেখে রাজের মধ্যে যেন এক ঝড় শুরু হয়ে গেল। তার পুরো শরীর আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত হতে লাগল। তার চোখ থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করল।
এটা হতে পারে না, আমি ড্রাগন নই।
রাজ তার হাতের দিকে তাকাল। তার পুরো শরীর বড় হতে লাগল। পরের মুহূর্তেই রাজের সব পোশাক পুড়ে গেল। আত্মিক জাহাজে এই দৃশ্য দেখে সবাই ওই দিকে তাকিয়ে রইল, এমনকি মরগ্যান, গ্যাব্রিয়েল আর লিসাও। এতগুলো ড্রাগনের সেনাবাহিনীও কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল।
রিয়া- রন, ওর কী হচ্ছে?
রন- নিজের চোখেই দেখে নাও, প্রিয়।
রনের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে রিয়া রাজকে অনেকবার ডাকল। কিন্তু রাজ পাগলের মতো হাসছিল। রাজের দাঁত গাল ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো। রাজ যন্ত্রণায় পাগলের মতো চিৎকার করতে শুরু করল। এবং দেখতে দেখতে বিশাল এক ড্রাগনে পরিণত হল। রাজ ড্রাগনে পরিণত হতেই একের পর এক তীব্র গর্জন করতে লাগল।
রন- তোকে আবার দেখে ভালো লাগল।
সাদা ড্রাগন রনের দিকে তাকাল। এবং রাগান্বিত হয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল এবং রনকে তার বড় নখওয়ালা থাবার মধ্যে ধরে উপরে উড়ে গেল।
এই দৃশ্য দেখে সবার চোখে ভয় জেগে উঠল।
সেথ- উপরে দেখো, ওরা দুজন ফিরে আসছে।
সবাই উপরের দিকে তাকাল। সাদা ড্রাগনের ডানা রনের কাঁধে যুক্ত হয়ে গেল এবং ড্রাগনের মাথা রনের মাথার সাথে যুক্ত হয়ে এক নতুন আকৃতি ধারণ করল। কিছুক্ষণের মধ্যে ড্রাগনের পুরো শরীর রনের সাথে যুক্ত হয়ে ড্রাগন হোল্ডার হয়ে গেল।
রন সরাসরি আত্মিক জাহাজের উপরের অংশে গিয়ে দাঁড়াল। এবং সমুদ্রের রাজা হিসেবে দেখতে লাগল।
বিলান্দার- এটা তো অবিশ্বাস্য। আমি সাদা ড্রাগন হোল্ডারকে দেখে ফেললাম। এ নিয়ে অনেক কিছু শুনেছিলাম। কিন্তু এর সেই কুঠারটা কোথায়?
রন তার হাত উপরে তুলল। আলোতে ঝলমল করা কিছু নিচে পড়তে শুরু করল, যা রন ধরে ফেলল। সেটা ছিল সাদা রঙের একটি কুঠার, যা এখনও ঝলমল করছিল।
রন- আমি হলাম মৃত্যু দ্বীপের রাজা, সমুদ্রের শিকারী মার্টিন।
রন তার কুঠারটা তীব্র গতিতে আকাশে ছুড়ে দিল, সেই ঝলমলে ফাঁসিটি কিছু ড্রাগনের মাথা কেটে ফেলল, আবার কিছু ড্রাগনের শরীর মুহূর্তের মধ্যে দু’ভাগ করে দিল।
Leave a Reply