মুল লেখক – দ্য ভ্যাম্পায়ার, অনুবাদ – আমি চৌধুরী
ওড়না মাথায় দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। যদিও এপ্রিল মাস তারপরও বাইরে খুব গরম এবং প্রখর রোদ। টিভিতেও শুনেছে যে এই বছর গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হবে। বিকেলের দিকে গ্রামের রাস্তাঘাট প্রায়ই জনশূন্য হয়ে পড়ে। মানুষ ১টার মধ্যে ঘরে ঢুকত এবং বিকেল ৪-৫টার আগে বের হতো না।
ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত পায়ে হেঁটে ও গ্রামের একটু বাইরে নির্মিত চার্চের দিকে এগিয়ে গেল। পেছন থেকে একটা গাড়ির আওয়াজ শুনে ও রাস্তার পাশে ঘুরে। ও জানে এটা কার গাড়ি। প্রতিদিন এই সময়ে এই গাড়িটি এখান দিয়ে যাতায়াত করত। কিন্তু আজ পেছন থেকে আসা গাড়িটি দ্রুত চলে না গিয়ে ওর কাছে পৌঁছানোর পর গতি কমে যায়।
“কেমন আছো সিরিশা?” মার্সিডিজের জানালা নিচে নেমে গেল, ও থেমে গাড়ির দিকে তাকায়। ওর বুক নিজে থেকেই ধড়ফড় করতে শুরু করে।
গ্রামের প্রতিটি মেয়েই বিঠালের জন্য পাগল এমনকি ওর নিজের দুই বড় বোনও। তার কারনও আছে। সে দেখতেও সেই রকম। লম্বা, চওড়া…… ইংরেজিতে কি বলে…. হ্যাঁ, টল ডার্ক এন্ড হ্যান্ডসাম। তিনি সবসময় দামী পোশাক পরে, দামী গাড়ী চালায়। ও আরও শুনেছে ভারতের প্রতিটি বড় শহরে বিঠালের বাবার বাড়ি আছে।
“আপনি আমার নাম কি করে জানলেন, বিঠাল সাহেব” জানালার একটু কাছে যেতেই ও বলল।
“তুমি আমার নাম জানো কিভাবে?” বিঠাল হেসে প্রশ্ন করে।
” আপনি কি যে বলেন। সবাই আপনাকে চেনে।” ও একটু লজ্জা পেয়ে বলল।
“হুমম” বিঠাল হাসল, “কোথায় যাচ্ছ?”
“গির্জা”
“গির্জা? সিরিশা কিন্তু তুমি ব্রাহ্মণ……।”
“আমি সেখানে যেয়ে একা বসতে পছন্দ করি, এই সময়ে গির্জায় কেউ থাকে না তাই আমি যাই, সম্পূর্ণ শান্তিতে আরামে বসে ঈশ্বরকে স্মরণ করা যায়” এক নিঃশ্বাসে বলল সিরিশা
” আরামে, শান্তিতে মন্দিরেও বসতে পারো। নাকি সেই সাদা ফাদারের সামনে মন্দিরের পুরোহিতকে পছন্দ কর না?”
এইভাবে ফাদার পিটারের নাম শুনে সিরিশা আরও বেশি বিব্রত হল। তিনি বাইরের কোন দেশ থেকে এসেছেন জানা নেই, তবে এখানে ভারতে এসেছেন খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য। তিনি নিজেকে একজন ধর্মপ্রচারক বলেন। তিনি যখন চার্চে দাঁড়িয়ে কথা বলে তখন সিরিশার হৃদয় এক অদ্ভুত স্বস্তি পায়। যখনই কোন কিছু সিরিশাকে অস্থির করে তুলতো ও প্রায়ই তা কনফেশন বক্সে বসে ফাদার পিটারকে বলত। ও গির্জায় তার সামনে সবকিছু স্বীকার করতে পছন্দ করে।
“তুমি জানো এই লোকেরা গরীবদের টাকা দিয়ে এখানে খ্রিস্টান বানায়?”
ও তখনও চিন্তায় নিমগ্ন ছিল কিন্তু বিঠালের কথা শুনে এক অদ্ভুত বিতৃষ্ণায় শিরিষার মন ভরে গেল। ও বিঠালের কথার উত্তর দেওয়া প্রয়োজন মনে না করে গাড়ি ছেড়ে সামনের দিকে যেতে লাগল।
“আরে এই গরমে কোথায় যাচ্ছো? চলো তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি।” পিছন থেকে বিঠালের চিৎকার শুনে শিরিশা এক মুহূর্ত ভাবতে বাধ্য হলো। গির্জাএকটু দূরে আর আজ একটু গরম ছিল। ও গির্জায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে ও ঘেমে যাবে আর এই অবস্থায় ও গির্জায় যেতে পছন্দ করে না।
“গাড়িতে এসি চলছে। আমি তোমাকে নামিয়ে দেব,” গাড়ির দরজা খুলে বলল বিঠাল।
সিরিশা মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে বসল। কিন্তু সেই সময় গির্জায় যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই সম্ভবত বিঠালের ছিল না।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?” গাড়ি চার্চে যাওয়ার বদলে অন্যদিকে ঘুরলে সিরিশা জিজ্ঞেস করল
“কোথাও না। চিন্তা করো না, আমি তোমাকে গির্জায় পৌছে দেব।” বিঠাল পিছন ফিরে হাসল…..
এরপর যা ঘটল তা সিরিশার জন্য ছিল স্বপ্নের মতো, এমন একটি খারাপ স্বপ্ন যা ভেবে ভয় পেয়ে গেল এবং ও রাগে লাল হয়ে গেল। গাড়ি থামিয়ে বিঠাল ব্যাক সিটে এসে ওর পাশে বসে।
“আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে যেতে দাও।” সে জোর করা শুরু করলে, সিরিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল।
“শুধু একবার…. কিছু হবে না…. তোমারও মজা লাগবে।”
“এটা একটা পাপ, তুমি আমার সাথে এটা করতে পারবে না”
“ওহ না এটা পাপ টাপ কিছু না” সে তার পেন্টের জিপ খুলে নিচে নামল।
এর পর সিরিশা শান্ত হয়ে জীবন্ত লাশের মতো হয়ে গিয়েছিল। গাড়ির পেছনের সিটে শুয়ে পাখির কিচিরমিচির শুনতে থাকে ও। ও জানত ওরা এখন যেখানে আছে, সেখানে এই সময়ে আশে পাশে দূর-দূরান্তে কেউ নেই, তাই কান্নাকাটি করে লাভ নেই।
“তুই উপর থেকে দেখতে যতটা না ভিতরে আরো বেশি সুন্দর” বিঠাল একটু মাথা তুলে বলে এবং নিচু হয়ে আবার বুক চুষতে লাগল। সিরিশার ব্লাউজ খোলা আর বিঠাল ওর ব্রা টেনে তুলে যাতে সে ওর উভয় বুকের সাথে খেলতে পারে। নিচ থেকে সে সিরিশার কোমর পর্যন্ত শাড়ী জড়িয়ে নিল এবং ওর খালি পায়ের মাঝে বিঠালকে অনুভব করে।
“এই পা একটু উপরে তোল না প্লিজ” বিঠাল ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারছে না।
কিছু না বলে সিরিশা একটা পা হাওয়ায় একটু উঁচু করে, তার কথায়। বিঠাল আবার ওর শরীরে ঢোকার চেষ্টা করল। সিরিশা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল এবং একেবারে ভিজে ছিল না, তাই ভিতরে যাওয়ার এই প্রচেষ্টাটি বিঠালের জন্য খুব বেদনাদায়ক মনে হয়।
“এক কাজ কর… একটু মুখে নিয়ে চুষে দে… ভিজে যাবে”
বিঠালের কথা শুণে সিরিশা তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় কিছু না বলে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।
“আরে রাগ করছো কেন, আমি তো জিজ্ঞেস করছিলাম” বিঠাল নিচু হয়ে ওর গালে চুমু খেয়ে তার হাতে একটু থুথু ছিটিয়ে লাগিয়ে আবার চেষ্টা করল। একটু কষ্ট হলেও এবার বাঁড়াটা বিনা থেমে ভেতরে ঢুকে গেল।
“আআআআআআআআআহহ…. খুব টাইট তুই…. চোদাস নাই কখনও?”
এবারও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি সিরিশা। ব্যথার কারণে ওর চিৎকার বের হতে থাকে এবং ওর চোখ জলে ভরে যায়।
“খুব মজা পাচ্ছি…. ওহ আমার প্রিয়… খুব গরম তুই… খুব টাইট”
আরো আবল তাবল বলতে বলতে একাই গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেল বিঠাল। সিরিশার দুই বুক ওর হাতে নিয়ে টিপতে টিপতে আর ওর গলায় চুমু খেয়ে ধাক্কার পর ধাক্কা মারতে থাকে। ওর নিচে বেচারি সিরিশা ডেবে কোন মতে নিজেকে গাড়ির সিটে ধরে রাখে। একে তো ছোট জায়গা আর তার উপর বিঠালের ধাক্কাধাক্কি, প্রতিমুহূর্তে ওর মনে হল ও পিছলে পড়ে যাবে।
“আআআআআআহহহহ” হঠাৎ বিঠল ওর এক বুকে দাঁত দিয়ে কামর দিলে ওর চিৎকার বেরিয়ে এল।
“দুঃখিত” দাঁত দেখিয়ে বললো, “নিয়ন্ত্রণ নেই, তোর এমন, এত বড় আর এত নরম”
সিরিশার মন চায় এক ঘুষি মেরে তার দুটি দাঁত ভেঙে দেয়।
“তাড়াতাড়ি করো” ও প্রথমবারের মতো বলল
“তাড়া কিসের…ভালভাবে মজা তো নিতে দে” বিঠাল আবার ধাক্কাতে থাকে।
“তুই মজা পাচ্ছিস না?”
সিরিশা কিছু বলল না
“আরে, কিছু তো বল… মজা লাগছে না?। তোর ভিতরে আমারটা কেমন লাগছে?”
ও তখনও কিছু বলল না
“পুরা ভিজে গেছে তারপরও বলছিস মজা পাচ্ছিস না?”
বিঠাল বলাতে এই প্রথম সিরিশার মনোযোগ এই দিকে গেল। ওর পায়ের মাঝখানের জায়গাটা একেবারে ভিজে গেছে এবং এখন বিঠাল খুব আরামে ওর ভেতর যাচ্ছে বের হচ্ছে।
” আমার গাড়ির সিটও ভিজিয়ে দিয়েছিস তুই”
সে সঠিকই বলেছে। সিরিশা নিজেই ওর কোমর এবং নিতম্বের নীচে ভেজা গাড়ির সিট অনুভব করতে পারে। ওর নিজের শরীর ওকে ছেড়ে বিঠালের সাথে চলে গেছে ও জানতেও পারেনি। ও এখন সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত এবং ওর শরীর বিঠালের প্রতিটি ধাক্কাকে স্বাগত জানাচ্ছিল।
“আমার বের হবে,” বিঠাল বলে এবং পাগলা কুকুরের মত ধাক্কাতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর ওকে গির্জার সামনে রেখে বিঠাল চলে যায়। সিরিশা গির্জার সদর দরজার দিকে এক মুহুর্তের জন্য তাকাল, এবং তারপরে ভিতরে যাওয়ার পরিবর্তে ঘুরে ফিরে বাড়ির দিকে চলে গেল। এই অবস্থায় কীভাবে গির্জায় যাবে? বিঠাল ওর শরীরের ভিতরে যা রেখে গেছে তা এখন ও বেরিয়ে এসে ওর পায়ে ভালভাবেই অনুভব করল। সেদিন যা হয়েছিল, সিরিশা সে কথা কাউকে বলেনি। এমনকি ফাদার পিটারের কাছেও না…..
মাত্র ২ সপ্তাহ পরই ও খবর শুনতে পায়। গ্রামের সবাই এ নিয়ে কথা বলছিল। বিঠfল রাজলক্ষ্মীকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। বিঠালের মতো রাজলক্ষ্মীর পরিবারও আশেপাশের এলাকায় সুপরিচিত ছিল। কিন্তু যেখানে বিঠালের পরিবারের সদস্যরা শুধুমাত্র জামাকাপড় এবং জুতার ব্যবসা করত, সেখানে রাজলক্ষ্মীর পরিবারের সদস্যরা অর্থের ব্যবসায় ছিল। তাদের ছিল সুদের ব্যবসা, এবং রাজনীতিবিদ এবং বড় বড় লোকদের সাথে উঠ বস করত। এটা বললে ভুল হবে না যে, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিতে তারা বিঠালের পরিবারের চেয়ে শতগুণ বেশি ছিলেন। দুই আভিজাত্য ও প্রতাপশালী পরিবারের সম্পর্ক সে সময় সবার মুখে মুখে।
সিরিশা বিঠালের বিবাহের কথা জানতে পেরে ও নিজেই বিদ্বেষের অন্ধ কূপে পতিত হয়। ধীরে ধীরে, ঘৃণা প্রতিশোধের জন্য অপ্রতিরোধ্য আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হতে থাকে। ওর মনে হতে লাগল ও বিঠালের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, তাকে কষ্ট পেতে দেখতে যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত।
কিন্তু ও কিছুই করতে পারেনা বা করার সুযোগও পায়না। জীবন এভাবেই ধীরে ধীরে এগোতে থাকে এবং ও নিজের মধ্যেই শোক করতে থাকে, জ্বলতে থাকে। অনেকবার ও চিন্তা করে যে বিঠাল ওর সাথে যা করেছে তা সবাইকে জানাবে, কিন্তু ও খুব ভাল করেই জানত যে এটা করলে কেবল ওরই মানহানি হবে বিঠালের কিছুই হবে না। ওর জীবন স্কুলের বই এবং গির্জার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পরে।
“তুই এত বড় ভক্ত কিভাবে হলি? তুই কি তোর বয়সী মেয়েদের দেখিস না? ওরা সাজুগুজু করতে করতেই সময় পায় না আর তুই পুজারী হয়ে বসে আছিস।” একদিন ওর মা ওকে বলেছিল।
“আমি গির্জায় যেতে পছন্দ করি। আমি সেখানে ভগবানের সামনে বসে থাকলে মনে হয় যেন তার কাছে আমার কিছুই লুকানো নেই, সবাই দেখছে।” জবাবে সিরিশা শুধু এইটুকু বলতে পারে।
২ মাস কেটে গেল ও এরমধ্যে আর কোনদিন বিঠালকে দেখতে পেল না। বাবা পিটারও এখন দেশে ফিরে গেছেন। এখন কনফেশন বক্সে বসে ওর মনের কথা শোনার ও বোঝার কেউ নেই।
বর্ষাকাল এসে গেল। পুরো আগস্ট মাস ধরে বৃষ্টি থামার নামও নেয়নি। সবসময় আকাশ মেঘে ঢাকা আর মাঝে মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। গ্রামের রাস্তাগুলো সর্বত্র কাদায় ঢাকা, ছাদে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার শব্দ পাগল করে দিত। আর বৃষ্টি থেমে গেলেও বাতাসে এত আর্দ্রতা থাকত যে মানুষ বসে বসে ঘামে গোসল করে তারপর বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে থাকে।
এবং একদিন, যখন ওর পুরো পরিবার ওর ছোট ভাইয়ের জন্মদিন উদযাপন করতে জড়ো হয়েছে, তখন এমন কিছু ঘটে যা সিরিশাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে তাড়িত করছিল। ও ওর ছোট চাচাতো বোনের সাথে বারান্দায় বসে খেলছিল এমন সময় হঠাৎ অবুঝ শিশুটি সবার সামনে বলে উঠে।
“আপু তুমি কত মোটা হয়ে গেছো, দেখ তোমার পেটটা কেমন ফুলে বেরিয়েছে”
সারা বাড়ির সবার চোখ সিরিশার পেটের দিকে। সবাই সিরিশার পেটের সেই ফুলে উঠা দেখেছিল, কিন্তু কে আগে কথা বলবে তার জন্য তারা অপেক্ষা করে। সিরিশাকে সেদিন স্কুল বা গির্জায় যেতে দেওয়া হয়নি।
“আমাদের এভাবে বিব্রত করে তুই কি পেলি?” ওর মা কাঁদতে কাঁদতে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আমাদের দিক থেকে কী কম ছিল যে তুই আজ আমাদের এই দিন দেখালি? এখন তোকে কে বিয়ে করবে? এই বয়সে বাবার নাম এভাবে নষ্ট দিয়ে কী অর্জন পেলি? এই দিনটি দেখার আগেই তিনি চলে গেছেন তা ভালোই হয়েছে। আজ বেঁচে থাকলে দাঁড়িয়েই মারা যেতে।” সকাল-সন্ধ্যায় এই সমস্ত কথাই চলতো। কখনো তার মা, কখনো আত্মীয়্রা। সবাই ওকে একই কথা বলতে থাকল আর সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, “বাচ্চার বাবা কে?”
যখন সিরিশা আর সহ্য করতে পারল না, তখন ও পরাজিত হয়ে সেই বিকেলের কথা সবাইকে বলল, যেদিন ওর সাথে পথে বিঠালের দেখা হয়েছিল।
“যদি মানহানি হয়, তবে আমার নিষ্পাপ সন্তানের একার মানহানি হবে না, বিঠালও ওর ভাগিদার হবে।” কথা শেষ হলে ওর মা বলল আর সবাই অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকাতে লাগলো।
“ওকে দাইয়ের কাছে নিয়ে যাও? সে জানে কিভাবে বাচ্চা ফেলতে হয়” তার বড় বোন ইন্দ্র বলল।
“তোমার মন খারাপ হয়ে গেছে? ওই মহিলা জানে না কিভাবে সন্তানের জন্ম দিতে হয়, সে কি করবে?” বললেন সিরিশার মা।
পরের দিন, সিরিশা ওর মায়ের সাথে শহরের একটি হাসপাতালে যায়। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে ও গর্ভবতী।
“কিছু করা যায়?” ওর মা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে।
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বিয়ে দিন” ডাক্তার জবাব দিলেন। সে ওর বাবার পুরানো বন্ধু ছিল এবং প্রায়ই ওদের বাড়িতে যেতেন।
“এখন আপনি বলুন এই হতভাগীকে কে বিয়ে করবে? এই বাচ্চার কিছু হবে না?”
বাইরে তখনও বৃষ্টি। আকাশে মেঘ এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে দিনেও রাতের অনুভূতি হচ্ছিল। ঘরে জ্বলন্ত বাল্বের চারপাশে অদ্ভুত পোকামাকড় উড়ছিল।
“আমি বাচ্চার ব্যবস্থা করতে পারি” ডাক্তার খুব নিচু গলায় বলে “কিন্তু জন্মের পর। এই সময়ে বাচ্চাকে ফেলে দেওয়া যাবে না। আপনার মেয়ে খুবই দুর্বল এবং ৩ মাসের উপরে গর্ভবতী। ও আমাদের যে তারিখ বলছে তা যদি সঠিক হয় তবে এটি ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণ মেয়াদ হবে৷ এই সময়ে কিছু করলে ব্যাপারটা আরও খারাপ হতে পারে। শিশুর পাশাপাশি এর জীবনও বিপন্ন হতে পারে।”
“এবং যদি ও সন্তানের জন্ম দেয়” ওর মা গোমড়া মুখে বলে, “যদি জন্ম নেয়, তারপর কি?”
“আমি এই সন্তান রাখতে চাই” সিরিশা হঠাৎ বলে উঠল।
“বোকার মত কথা বলিস না”
“এই শিশুটি আমার। আমি একে জন্ম দিতে চাই। আমি এটি রাখতে চাই।”
“আর খরচ কে বহন করবে? তোমাদের দুজনের দেখাশোনা কে করবে?”
“আমার ভবিষ্যত স্বামী” সিরিশা প্রথমবারের মতো ওর মায়ের চোখে তাকায়
“আর কে তোমাকে বিয়ে করবে?”
“বিঠাল। আমার অবস্থার জন্য যে দায়ী সে বিয়ে করবে”
“আপনার মেয়ে এত বোকা না” বলল ডাক্তার। সে এতক্ষণ মা-মেয়ের কথা শুনছিল।
“যাই হোক, আপনাকে যেভাবেই হোক ওকে বিয়ে দিতেই হবে, তাই বিঠালের সাথে একবার কথা বলে দেখুন। চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?”
আর তারপরে সিরিশা যেমন চেয়েছিল, ওর মা ওকে বিঠালের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সবাই অবাক হয়ে গেল যখন বিঠাল বিনা দ্বিধায় মেনে নিল যে সে জোর করে সিরিশার সাথে খারাপ কাজ করেছে। এবং আরও বড় চমক দেখা গেল যখন ও তৎক্ষণাৎ সিরিশাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল।
“হয়তো আমি যতটা ভাবছিলাম ততটা খারাপ না।” প্রথমবারের মতো বিঠালের জন্য সিরিশার হৃদয়ে একটি সূক্ষ্ম অনুভুতি তৈরি হয়।
কথা মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাথে বিঠালের পরিবারের সম্মানও ভুলুন্ঠিত হয়। সবাই বলল এই বদনামের থেকে বাচার একটিই রাস্তা, সেই হতভাগী মেয়েটিকে যাকে তাদের ছেলে অসম্মান করেছে তাকে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে তাদের বাড়ির পুত্রবধূ করা। আর এর জন্য প্রথম পদক্ষেপ ছিল রাজলক্ষ্মীর সঙ্গে বিঠালের বিয়ে ভেঙে দেওয়া। আর কেউ বলল, বিঠাল একটা কাপুরুষ, তাই বিয়েতে রাজি হয়েছে। কেউ বলে, তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশি মামলায় নামতে চান না, তাই বিয়ের জন্য জোর দিয়েছে। কেউ বলে, সিরিশা বিঠালের উপর ধর্ষণের মামলা করেছে, তাই বিয়ের কথা বলা শুরু হয়েছে।
কেউ একজন বলে, আর যেটা সিরিশা নিজেই ভেবেছে, বিঠাল কুৎসিত রাজলক্ষ্মীকে বিয়ে করতে চায়নি বলেই সঙ্গে সঙ্গে সিরিশার হাত ধরেন তিনি। রাজলক্ষ্মী অবশ্যই একটি ধনী এবং একটি বড় পরিবারের মেয়ে, কিন্তু সবাই জানত ও দেখতে সুন্দর তো দুরের কথা, এমনকি ও একটি সাধারণ মেয়ের থেকেও খারাপ দেখতে। আর তার উপর মেয়েটা অনেক মোটা। তার তুলনায় নিষ্পাপ দেখতে সিরিশা তো আকাশ থেকে নেমে আসা পরীর মতো। রাজলক্ষ্মীর সাথে তার বিয়ে এড়াতে বিঠাল জোর করে সিরিশার সাহায্য নিয়েছে।
কারণ যাই হোক না কেন, বিঠাল বিয়েতে রাজি হয়ে খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। আর রাজলক্ষ্মীর পরিবারের সদস্যরা তার চেয়েও বেশি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। এভাবে সম্পর্ক ভাঙার জন্য তারা হয়তো ভেতর থেকে অপমানিত বোধ করলেও উপর থেকে কিছুই প্রকাশ পেতে দেননি। আরও কি, তারা তো বিঠালের পরিবারের সাথে তাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক বলবৎ রাখে।
রাজলক্ষ্মীর তিন ভাই এমনকি বিঠালকে তাদের নতুন খামারবাড়ি দেখার আমন্ত্রণও পাঠিয়েছে যাতে দুই পরিবারের মধ্যে যাই হোক না কেন, আর যেন আগে না বাড়ে আর সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিঠালও চায় এই গোটা ঘটনায় যেন কারও ক্ষতি না হয়, তাই ও সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ বলে। কিন্তু ভগবানের খেলা বোঝা দায়, ওই দিনই খামারবাড়ির দিকে যাওয়ার সময় বিঠালের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। না তো সেই ট্রাকটি যেটা বিঠালের গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিল না সেই ট্রাক চালককে কোথাও পাওয়া যায়না।
তিন দিন পর বিঠালের শেষকৃত্য হল। আবার কথার বাজার উত্তপ্ত হয়ে উঠল। কেউ কেউ বিশ্বাস করতো যে বিঠালের সাথে যা ঘটেছে তাতে ভগবানের হাত ছিল। একটি নিষ্পাপ মেয়ের সাথে তার আচরণের জন্য ভগবান তাকে শাস্তি দিয়েছে। ঈশ্বর রাগান্বিত আর এই কারণেই এই বছর এত বৃষ্টি।
কিছু লোক বিশ্বাস করে যে বিঠাল মারা যায়নি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। রাজলক্ষ্মীর পরিবারের সদস্যরা ছিলেন শ্রদ্ধেয় ও অহংকারী মানুষ। মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় যে অপমান হয়েছে তা তারা সহ্য করবেন কী করে? তিন ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন। ভাইয়েরা তাদের বোনের প্রতিশোধ নিয়েছে।
‘যাই হোক ভাই’ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা একজন বলে, ‘আমরা কথা বলার কে?’ ছেলের শরীর ঠান্ডা হওয়ার আগেই দুর্ঘটনা বলে ফাইল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, কেন ঘটল, তাও জানার চেষ্টা করা হয়নি।
আশ্চর্যের বিষয় যে, যেদিন বিঠালের চিতায় অগ্নিসংযোগ করা হয় সেদিনই এতক্ষদিনের অবিরাম বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল।
সকলেই ভেবেছিল যে বিঠালের মৃত্যুতে সিরিশা গভীরভাবে মর্মাহত হবে। সর্বোপরি, তিনি ওর সন্তানের পিতা এবং ওর ভবিষ্যতের স্বামী ছিলেন। এবং সম্ভবত হয়েছেও।
পুরোপুরি শোকে পাথর সিরিশা। এটি একটি ধাক্কা বা অন্য কিছু হোক না কেন, নির্ধারিত তারিখ আসে এবং চলে যায় কিন্তু সিরিশার সন্তান হয়না। এবং যখন হয়, নির্ধারিত তারিখ থেকে পুরো এক মাস কেটে গেছে। অর্থাৎ, তখন সিরিশা পুরো ১০ মাসের গর্ভবতী ছিল।
হাসপাতালের পুরো খরচ বহন করে বিঠালের পরিবার। শহরের একটি দামী হাসপাতালে শিশুটির জন্ম হয় এবং তার জন্মের আগেই বিঠালের বাবা এই ঘোষণা করেছিলেন যে শিশুটির নাম বিঠাল রাখা হবে এবং তাকে লালন-পালনের পুরো খরচ তিনি নিজেই বহন করবেন। তিনি নিজে পরিবারের সাথে সন্তান হওয়ার পর সিরিশার সাথে দেখা করতে এসে শিশুটির নাম রেখেছিলেন।
সারাদিন সিরিশা একা থাকার কোনো সুযোগ পেল না। লোকজন আসতেই থাকল। কেউ না কেউ ওর সাথে দেখা করতে আসতো। কেউ শিশুর জন্য কেউ নতুন মায়ের জন্য বিভিন্ন উপহার নিয়ে আসে। কেউ ওর বাড়ির এবং কেউ বিঠালের বাড়ির, যারা সম্ভবত ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে তাদের পুত্র, তাদের সন্তানের প্রতীক স্বরুপ বাচ্চাটাকে গ্রহণ করেছিলেন। যারা আসে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে শিশুটি সিরিশার মতো আবার কেউ বিঠালের মতো দেখতে হয়েছে বলে।
পরের দিন যখন ওর মা বাড়ি থেকে কিছু জিনিস আনতে যান, তখন প্রথমবারের মতো শিশুটির সাথে একা থাকার সুযোগ পান সিরিশা। ও আদর করে সন্তানকে কোলে নিয়ে তার দিকে তাকায়। এক নজরেই ও বুঝতে পারে, শিশুটি ওর মতো দেখতেও নয়, বিঠালেরও মতোও নয়। শিশুটির চোখ বাদামী এবং বাদামী চোখগুলি সিরিশারও নয়, বিঠালেরও নয়। দুজনেরই কেন সারা গ্রামেই বাদামি চোখ ছিল না কারো।
শুধু ফাদার পিটার ছাড়া।
Leave a Reply